close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বান্দরবানে অবৈধ ইটভাটায় মোবাইল কোর্টের অভিযান: মালিককে জরিমানা, জ্বালানি কাঠ জব্দ....

Rakib Hasan avatar   
Rakib Hasan
প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করার সাহস না পায়।..

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পরিচালিত অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা ও জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের এই অভিযানকে সাধারণ জনগণ স্বাগত জানালেও প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের নির্দেশনা বারবার লঙ্ঘন করেও কীভাবে এসব ইটভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে?

অবৈধ ইটভাটার দৌরাত্ম্য ও পরিবেশ ধ্বংস

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বান্দরবানের লামাতেও বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যেখানে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং কাঠ পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি হিসেবে। অথচ উচ্চ আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং পাহাড় কাটার মতো পরিবেশবিধ্বংসী কাজ কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব ইটভাটা বহাল তবিয়তে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কিছুদিন পর আবারও তারা কার্যক্রম শুরু করে দেয়। এবারের অভিযানে মোবাইল কোর্টের নেতৃত্বে অবৈধ ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়েছে।

প্রশাসনের অভিযান এবং আইনের প্রয়োগ

স্থানীয় প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এই অভিযান চালায়। অভিযানের সময় সংশ্লিষ্ট ইটভাটা থেকে প্রচুর কাঠ জব্দ করা হয়, যা অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে, তবে প্রশ্ন থেকে যায়—শুধু জরিমানাই কি যথেষ্ট?

এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের জন্য মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি ইটভাটাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া জরুরি।

পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ

এই ধরনের অবৈধ ইটভাটার কারণে স্থানীয় পরিবেশ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহের ফলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে, জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এবং এলাকার কৃষি জমি বিপন্ন হচ্ছে।

এছাড়া, কাঠ পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তারা চান, যেন এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রশ্ন রয়ে গেল: কতটা কার্যকর হবে এই অভিযান?

বাংলাদেশে এ ধরনের অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও কিছুদিন পর আবারও তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেয়। মূল সমস্যা হলো, প্রশাসনের অনেকেই হয়তো ঘুষের বিনিময়ে এসব কার্যক্রমে মৌন সম্মতি দেন, অথবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ইটভাটাকে রক্ষা করেন।

যদি সত্যিই এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হয়, তাহলে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। শুধু জরিমানা করলেই হবে না, বরং যেসব ইটভাটা নিয়মিত আইন অমান্য করছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেমন—পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া।

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগরে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের এই অভিযান প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করার সাহস না পায়। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর উচিত এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া, যেন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস না হয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator