ভাইরাল হওয়া যুবক রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে বাবা-মাকে ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তার প্রতিবেশীরা; তাদের মতে, বাবার অদ্ভুত আচরণের কারণেই সমস্যার সূত্রপাত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত চরিত্র রিপন মিয়াকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের করা অভিযোগের উল্টো চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেশীদের সাক্ষ্যে। একটি ভাইরাল ভিডিওতে রিপনের বাবা-মা দাবি করেছিলেন যে তাদের ছেলে তাদের দেখভাল করে না এবং কোনো টাকা-পয়সা দেয় না। তবে স্থানীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিপন মিয়া শুধু তার বাবা-মাকে ছেড়েই যাননি, বরং নিয়মিত অর্থ সহায়তা দেন—যা তার বাবা-মা স্বীকার করতে নারাজ।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রিপন মিয়া তার বাবা-মাকে নিয়মিত টাকা-পয়সা দেন। কিন্তু তার বাবা-মা এই সত্যটি স্বীকার করেন না, বরং উল্টো মানুষের কাছে কান্না করে বেড়ান যে তাদের ছেলে-মেয়েরা কেউ তাদের টাকা দেয় না। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে উভয়েই টাকা দিলেও, তারা সবার সামনে এই কথা অস্বীকার করেন।
প্রতিবেশীরা আরও নিশ্চিত করেছেন যে, রিপন মিয়া বর্তমানে যেখানে থাকেন, সেই জায়গাটি তার বাবার ছিল। কিন্তু তিনি নিজেই তার বাবাকে টাকা দিয়ে সেই জায়গাটি কিনে নিয়ে সেখানে বাড়ি তৈরি করছেন। এটি প্রমাণ করে যে বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি, বরং তিনি তাদের সঙ্গে লেনদেনের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। বর্তমানে যেই চ্যানেলে তিনি থাকেন, সেই এলাকার লোকজনই তাকে ঘর তৈরি করতে সাহায্য করছে।
রিপন মিয়ার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কিছু তথ্য সামনে এসেছে। তার এক ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী জানান, রিপন হঠাৎ একদিন তার কাছে এসে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রিপন জানান যে তিনি এক প্রেম করছেন, কিন্তু সেই প্রতিবেশী তাকে বিয়েতে সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করলে, রিপন অন্য একজনকে ধরে বিয়ে করেন। পরে তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে তিনি ওই প্রতিবেশীর বাড়িতে ছয় বছর ধরে ছিলেন । এরপরেই তিনি জায়গা কিনে আলাদা হয়ে যান।
রিপনের শৈশবের প্রতি তার বাবার আচরণের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরেন একজন প্রতিবেশী। তিনি জানান, রিপন যখন তাদের দোকানে বসে গল্প করতেন, তখন রিপন বলেছিলেন যে তার বাবা এদিক দিয়ে গেলে তাকে বকবেন। রিপন আরো বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তার বাবা কোনো কারণ ছাড়াই তাকে বকেন। তার ছেলে সমাজে সুনাম অর্জন করলেও, তার বাবার স্মৃতিতে সেই সম্মান বা স্বীকৃতির স্থান নেই।
প্রতিবেশীদের মতে, রিপন অত্যন্ত সাধারণ এবং সাদা-মাটা একজন মানুষ। প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে তিনি তার দোকানে আসতেন, সবার সাথে গল্প করতেন এবং চা খেতেন। ভাইরাল হওয়ার পরে গত তিন দিন ধরে তাকে সেই আড্ডা বা গল্পগুজবে দেখা যাচ্ছে না, যা হয়তো এই ঘটনার কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপের ফল।
অনেকে মনে করেন, প্রতিটি পরিবারেই ছোটখাটো সমস্যা থাকে। রিপন হয়তো তার বাবা-মাকে সম্পূর্ণরূপে দেখভাল করতে পারছেন না, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি একেবারেই কিছু করছেন না। রিপনের অন্যান্য ভাই-বোনরাও টাকা দেন, কিন্তু বাবা-মা তাদের সাহায্য পুরাপুরি স্বীকার করেন না
পুরো আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, রিপন মিয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি চাপা সমস্যা বা পারিবারিক বঞ্চনার ইতিহাস রয়েছে, যার কারণে বাবা-মা তাদের সন্তানের সাহায্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। প্রতিবেশীরা রিপনের পক্ষে কথা বলে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, রিপন তার সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন, কিন্তু সম্পর্কের জটিলতার কারণে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
পারস্পরিক অভিযোগ ও পারিবারিক বঞ্চনার এই চিত্রটি শুধু রিপন মিয়ার নয়, বরং আধুনিক সমাজের জটিল পারিবারিক সম্পর্কের একটি গভীর প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে।