বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব ও সাবেক আমলা এ বি এম আব্দুস সাত্তার দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আট উপদেষ্টা সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও প্রমাণ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন সাবেক সচিব এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। তিনি সরাসরি দাবি করেন—অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত আটজন উপদেষ্টা সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িত, এবং এই দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ তাঁর হাতে রয়েছে। শুধু তাঁর কাছেই নয়, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও এসব তথ্য রয়েছে, তবুও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত এই আমলা বলেন, বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে ওই উপদেষ্টাদের অনুমতি বা যোগাযোগ ছাড়া কিছুই হয় না। সেমিনারের মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন, “জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা এই আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ আমি দিতে পারব।” তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত কর্মকর্তারা করতালি দিয়ে সমর্থন জানান।
আব্দুস সাত্তার আরও প্রশ্ন তোলেন—একজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস)-এর অ্যাকাউন্টে যখন ২০০ কোটি টাকা পাওয়া যায়, তখন কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য ব্যক্তিদের উপদেষ্টা হিসেবে বসানো হয়েছে, যার ফলে দুর্নীতি আরও গভীর হচ্ছে।
তিনি উদাহরণ দেন যে, এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি স্কুলের নামজারির জন্য ৩০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন। এমনকি ঢাকার আশপাশের এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একটি কারখানার লে-আউট অনুমোদনের জন্য দাবি করেছেন ২০ লাখ টাকা। তাঁর মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতি কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে।
আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে বসেন। গত ৫ আগস্ট থেকে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে আসছেন। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে তিনি একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেন—“কোনো কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রয়োজনে অফিসার্স ক্লাবে যোগাযোগ করুন।”
সেমিনারে উপস্থিত সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “আব্দুস সাত্তার একজন দায়িত্বশীল মানুষ। প্রমাণ ছাড়া তিনি কখনো এমন অভিযোগ তুলবেন না।” তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান, অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে ওই আটজন উপদেষ্টাকে চিহ্নিত করতে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, বর্তমানে কর্মকর্তাদের মধ্যে সাহসের অভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর জোর দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, অতীতের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে, এখন প্রশাসনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে কার্যকর উপায় বের করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যও সেমিনারে বক্তব্য দেন। তারা প্রশাসনে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অব্যবস্থাপনা বন্ধের দাবি জানান, যাতে শহীদদের রক্ত বৃথা না যায়।