close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আরও ৮১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলায় নিহত ৮১ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে বিস্ফোরণ, শিশুরাও নিহত। মানবিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে।..

গাজা উপত্যকা আবারও পরিণত হয়েছে এক বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরীতে। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিকতম নৃশংস হামলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮১ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। শনিবার দুপুর পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছে হামাস-পরিচালিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

একের পর এক বোমা, মিসাইল আর ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে শরণার্থী শিবির, আবাসিক এলাকা এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে গাজা শহরের একটি স্টেডিয়ামের কাছে, যা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সেখানেই শিশুসহ কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালের কর্মীরা।

বিবিসির যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা খালি হাতে কিংবা কোদাল দিয়ে বালুর স্তূপ খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যে একজন বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “আমার নাতি ছিল এখানে, এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ।” এই চিত্র যেন পুরো গাজার বর্তমান বাস্তবতা।

আহমেদ কিশাউই নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,এই এলাকাটি তাঁবুতে পরিপূর্ণ ছিল। এখন তাঁবুগুলো আর নেই, বালুর নিচে চাপা পড়েছে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খালি হাতে খুঁড়েছি – শুধু স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার আশায়।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতাকে "মানবিক বিপর্যয়ের রূপ" বলেই আখ্যা দিচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, কমছে খাবার, পানি, ওষুধ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ। হাসপাতালে জায়গা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামও নেই।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা অফিস জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাংশে কিছু এলাকায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিটি বোমা মানে একেকটি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে বলেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ‘নির্ভুল অভিযান’ পরিচালনা করছে। তবে গাজার বাস্তব চিত্র বলছে অন্য কথা — হামলার শিকার হচ্ছেন মূলত বেসামরিক মানুষ, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল হয়তো হামাস দমনের যুক্তিতে অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল।

ফিলিস্তিনি জনগণের এই দুঃসহ পরিস্থিতি বিশ্ব বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একের পর এক গণহত্যার এই ধারায় যদি এখনই বিশ্ব সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ না করে, তবে গাজা একদিন পুরোপুরি জনমানবশূন্য হয়ে যেতে পারে। মানবতার এই বিপর্যয়ে এখন প্রয়োজন বৈশ্বিক জবাবদিহিতা, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা এবং মানবিক সহায়তার দ্বার উন্মুক্ত করা।

গাজার বাতাসে এখন শুধুই মৃত্যু আর ধ্বংসের গন্ধ। প্রশ্ন উঠছে—আর কত? আর কত প্রাণ গেলে বিশ্ব বলবে, "এবার যথেষ্ট হয়েছে?

Nenhum comentário encontrado