বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। চলমান ডলার স্থিতি বজায় রাখতে এবং রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারীদের স্বার্থ রক্ষায় বৃহস্পতিবার আরও ১০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ডলারগুলো দেশের ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কিছুটা বেশি, ফলে বাজারমূল্য ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে ডলার কিনে আসছে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় প্রবাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে নেওয়া একটি নীতিগত পদক্ষেপ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ২০৮ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে। সর্বশেষ ডলার ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির তত্ত্বাবধানে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। সর্বশেষ লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা।
এর আগে গত ১৩ জুলাই থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে ১৩ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, এবং ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়েও বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক ধাপে ডলার কিনেছে। ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ১৪ আগস্ট ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, ২৮ আগস্ট ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, ২ সেপ্টেম্বর ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, ৪ সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ৯ সেপ্টেম্বর ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১৫ সেপ্টেম্বর ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২২ সেপ্টেম্বর ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ৬ অক্টোবর ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার ক্রয় করা হয়েছিল।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ধারাবাহিক পদক্ষেপ ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে এবং বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে। তারা আরও বলেন, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়লে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়বে, যা ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামার মাঝেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ভারসাম্য আনার এই নীতিগত পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।