close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি,ড. ইউনূস..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নয়, তবে দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখন ইসির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এ বক্তব্য ঘিরে ..

রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এক বিস্ফোরক বার্তা দিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম বিবিসি ইংরেজিকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নয়, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, তা এখন নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর।

এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথন, যা শনিবার (২১ জুন) বিবিসি বাংলাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়। তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে তৈরি হয় তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।

ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন,আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে, যার আওতায় নির্বাচন অংশগ্রহণও পড়ে। তারা নির্বাচনে থাকবে কিনা, সেটা এখন সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার

তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনী অংশগ্রহণ এখন একান্তই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. ইউনূস জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন,অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই মূল বিষয়। মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলেই তা অন্তর্ভুক্তিমূলক।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, নির্বাচন তখনই সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য হবে, যখন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে—দলীয় রাজনীতির উপস্থিতির চেয়ে ভোটারের অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন,প্রথমে দেখা উচিত জনগণ কী চায়। তারা যদি আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায়, তাহলে সেটার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

তার বক্তব্যে বোঝা যায়, কোনো দল জনপ্রিয় কি না, সেটা ভোটারের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকারেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।

সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে বিতর্কিত অংশটি আসে যখন ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়—“শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না?” তিনি বলেন,বিচার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আমরা চাই তিনি আইনি পথে বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক আইন ও পদ্ধতি অনুসরণ করব—যেভাবে অন্য অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনা হয়

তিনি আরও যোগ করেন—তাকে ধরে আনার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই, এটা সম্পূর্ণ আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়।”

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য একদিকে আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে, অপরদিকে এই সংকটের শান্তিপূর্ণ ও বৈধ সমাধানের বার্তা বহন করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূসের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত কৌশলী ও সুপরিকল্পিত। তিনি একদিকে আওয়ামী লীগকে সরাসরি নিষিদ্ধ না বলে আইন ও প্রক্রিয়ার আড়ালে রাখলেন, অন্যদিকে দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে একটি নিরপেক্ষ বার্তা পাঠালেন।

একজন সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,এই বক্তব্য একদিকে ইসিকে ক্ষমতাবান করছে, আবার অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ভবিষ্যত ঝুলিয়ে রাখছে—যেটি রাজনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী কৌশল।

বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘিরে এমনিতেই রয়েছে প্রচণ্ড উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ জটিলতা। এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের বক্তব্য যেন নতুন করে আগুনে ঘি ঢালল।

Nema komentara