আগামী বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার আগেই রাজধানী ঢাকার আটটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং চার স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব সিরিজ নাশকতার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর না থাকলেও, নগরজুড়ে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বললেও, ‘বিশেষ দিন’ টার্গেট করে এসব অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সংবেদনশীল ও ব্যস্ত এলাকায় এসব ঘটনা ঘটানো হয়।
ককটেল বিস্ফোরণের স্থান (৮টি):
| সময় | স্থান | বিবরণ |
| সকাল | প্রবর্তনা, মোহাম্মদপুর | কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠানের সামনে ও সীমানা প্রাচীরের ভেতরে দুটি ককটেল ছোড়া হয়। |
| সকাল | ধানমন্ডি (২ স্থান) | ২৭ নম্বরের মাইডাস সেন্টার ও ৯/এ সড়কে ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে দুটি করে ককটেল বিস্ফোরণ। |
| ভোর | মিরপুর | গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ। |
| সন্ধ্যা | মৌচাক | মৌচাক ক্রসিংয়ের সামনে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ককটেল ছোড়া হয়। |
| সন্ধ্যা | মিরপুর-১০ | শাহ আলী মার্কেটের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। |
| সন্ধ্যা | শেরেবাংলা নগর | বেতার ভবনের সামনের সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ। |
| সন্ধ্যা | খিলগাঁও | খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর ককটেলের বিস্ফোরণ। |
বাসে অগ্নিসংযোগের স্থান (৪টি):
| সময় | স্থান | বাসের বিবরণ |
| সকাল | শাহজাদপুর | যাত্রীবাহী ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে আগুন। |
| সকাল | বাড্ডা | আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে)। |
| সন্ধ্যা | ধানমন্ডি | শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বহনকারী বাসে আগুন (ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে)। |
| মধ্যরাত | যাত্রাবাড়ী | রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আগুন। |
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা এসব নাশকতার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
-
বিচ্ছিন্ন ঘটনা?: তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান এই ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই মনে করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
-
বিশেষ দিন টার্গেট: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “বিশেষ কোনো দিন টার্গেট করে এসব অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
-
শনাক্তকরণ: ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা জানান, মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা ককটেল ছোড়ে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মিরপুর থানার ওসি সাজ্জাদ রোমন জানান, মিরপুরে সিসি ক্যামেরা দেখে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে ডিএমপি যখন সতর্ক অবস্থানে, তার ঠিক আগে আগে এই সিরিজ নাশকতার ঘটনাগুলো সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ।
১. নাশকতার ইন্ধন: এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, কোনো একটি পক্ষ রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে জনমনে ভয় ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে। বিশেষত, জামায়াতসহ আট দলের পক্ষ থেকে ১১ নভেম্বর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডগুলো আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
২. টার্গেট স্থাপনা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কার্যালয় এবং ফরহাদ মজহারের প্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল হামলা ইঙ্গিত দেয় যে, সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বা তাদের রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করা হচ্ছে।
৩. সাধারণ মানুষের আতঙ্ক: যাত্রীবাহী বাসে আগুন এবং ব্যস্ত এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ—এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত হানে, যা নগরজুড়ে স্বাভাবিক জনজীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দ্রুত এই ঘটনার পেছনের মূল হোতাদের শনাক্ত করা এবং আগামী দিনগুলোতে যে কোনো ধরনের সংঘাত ও নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা।



















