আওয়ামী লীগ আবারও পুরো জাতির সঙ্গে নির্মম প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। মঙ্গলবার (১ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেখানে তিনি বলেন, “ভুল বুঝতে পারা দুর্বলতা নয়—এই কথাটি শুনে আমি মনে করেছিলাম, হয়তো এবার আওয়ামী লীগ নিজেদের কর্মের জন্য জাতির কাছে অনুশোচনা প্রকাশ করবে। কিন্তু পরে যা দেখলাম, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরং তারা আবারও পুরো জাতির সঙ্গে এক ধরনের উপহাস করল। এটি প্রমাণ করে দেয়, তারা কখনোই শোধরাবে না।
ফয়েজ আহমদ বলেন, “আওয়ামী লীগ সুযোগ পেলেই আগের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। তারা হিংস্র জানোয়ারের মতো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে যাবে। যে কোনো মুহূর্তে গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে আওয়ামী লীগ সেই ফাঁকটিকে কাজে লাগিয়ে আবারও আগ্রাসী রূপে ফিরে আসবে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, “আসলে আওয়ামী লীগের ফেরার কোনো পথ নেই। কারণ, দলটি যদি রাজনীতির ময়দানে ফিরতে চায়, তবে তাদের স্বীকার করতে হবে—জুলাই মাসের গণহত্যা থেকে শুরু করে গত ১৬ বছরে সংঘটিত গুম-খুন ও নিপীড়নের দায়ভার। আর এর সব দায়-দায়িত্ব পড়ে যাবে শেখ হাসিনার কাঁধে। সেক্ষেত্রে তিনি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারবেন না।
ফয়েজ আহমদ আরও দাবি করেন, “শেখ হাসিনা নিজেও জানেন, তার এবং তার পরিবারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন আর দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ যদি কখনো রাজনীতিতে পুনরায় শক্ত অবস্থান নিতে চায়, তবে সেটি পুরনো রূপরেখায় সম্ভব নয়। একটি সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে ফিরতে হবে। কিন্তু সেটি শেখ হাসিনা জীবিত থাকা অবস্থায় হবে—এমনটা আশা করা বোকামি। কারণ, তিনি কোনোভাবেই নিজের বিরুদ্ধে দায় স্বীকার করে নতুন নেতৃত্বকে আসতে দেবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “এই রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষণে ক্ষণে গর্জে উঠার ভান করবে, কিন্তু তা নিছকই প্রতীকী ও উদ্দেশ্যমূলক হবে। দলের মূল কাজ হবে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফয়েজ আহমদের এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক ভাষণের একটি অংশ নয়—বরং এটি বর্তমান সরকার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের এক শ্রেণির হতাশা ও ক্ষোভের প্রতিফলন। বিশেষ করে যারা মনে করেন, দেশে গুম, খুন ও অন্যায় বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে, তাদের মাঝে এই বক্তব্য নতুন করে আলোড়ন তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের বক্তব্য দেশে রাজনীতির উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রাক্কালে।
ড. ইউনূসের উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদের বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই বক্তব্য শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তির জন্য একটি বড় বার্তা—জনগণের ধৈর্য এবং বিচারবোধকে যেন কেউ তুচ্ছ না ভাবে।
আসন্ন সময়েই বোঝা যাবে, আওয়ামী লীগ তার অতীত থেকে শিক্ষা নেয় কিনা, নাকি জাতির সামনে আরেকটি প্রতারণার গল্প রচনা করে।