close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ ১২ নেতা: ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ চেয়ে আবেদন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ দেশের শীর্ষ ১২ সাবেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে চাঞ্চল্যকর অগ্রগতি। ইন্টারপোলে রেড নোটিশ চেয়ে পুলিশ সদর দপ..

আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ ১২ নেতা: ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ চেয়ে আবেদন

দেশে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জন সাবেক মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদন তিন ধাপে পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) পক্ষ থেকে। উদ্দেশ্য—পলাতক এই ব্যক্তিদের বিশ্বজুড়ে নজরদারিতে আনা ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারের আওতায় আনা।

যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ চাওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ

আবেদনে শেখ হাসিনাসহ অধিকাংশের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষভাবে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ। এনসিবি বিভাগ জানিয়েছে, এসব আবেদন তদন্তকারী সংস্থা ও রাষ্ট্রপক্ষের অনুরোধে করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২২টি মামলা হয়েছে, যাতে অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৪১ জনকে। এর মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও ৮৭ জন এখনো পলাতক। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই ১২ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ।

চূড়ান্ত পর্যায়ে তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণে এক হাজার ব্যক্তি

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় আরও জানায়, শেখ হাসিনাসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর মধ্যে রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ, সাভারে লাশ পোড়ানো, রামপুরা গুলিকাণ্ড, এবং চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড। এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অচিরেই ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।

তদন্ত কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য বিশ্লেষণ, জিও লোকেশন যাচাইসহ নানা প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই চলছে। গুমবিষয়ক তদন্তেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকাসহ পাঁচটি জেলায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে গুম সন্দেহে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেন্দ্র, যেমন আয়নাঘর ও এলআইসি নামের স্থানে। তদন্তে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে চারটি গণশুনানিও গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক সংযোগ

ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আদালতের আদেশ ও অন্যান্য প্রমাণাদিসহ আবেদন প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, সেখান থেকে আইজিপির কার্যালয়ের মাধ্যমে তা ইন্টারপোল সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার ইতিমধ্যেই ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের আবেদন আইজিপির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, “এই আবেদনগুলোর সঙ্গে প্রমাণ, সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ ও তদন্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ও বিধান অনুসারে ইন্টারপোল এগুলোর পর্যালোচনা করে রেড নোটিশ জারি করবে।”

ইতিহাসের দায় ও বিচারের অপেক্ষা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মূলত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। কিন্তু বর্তমান সময়ের গুম, খুন, নির্যাতন ও গণহত্যার মতো ঘটনাগুলো বিচারের আওতায় আনতে ১৪ অক্টোবর নতুন করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি। এসব ঘটনার স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা আদালতে এগুলো তুলে ধরতে প্রস্তুত।”

 

এই মামলাগুলো কেবল কয়েকজন নেতার বিচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস ও ন্যায়বিচারের পথে এক বড় পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক আদালতের দৃষ্টিতে এই অপরাধগুলো কতটা গুরুত্ব পায়, তা নির্ভর করবে তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার শক্তিমত্তার ওপর। এখন অপেক্ষা, ইন্টারপোলের পদক্ষেপের।

نظری یافت نشد