অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হলো। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, যা ইতোমধ্যে তার মোট রিমান্ডের মেয়াদকে ৬০ দিনের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে অস্ত্র আইনের মামলায় ফের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। ১ জুলাই সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার একজন উপপরিদর্শক আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল হক দিদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলার স্বার্থে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন, সেই কারণে আমরা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের অনুমতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বনানী থানায় করা অস্ত্র আইনের একটি মামলায় আনিসুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড শুনানিতে আসামিপক্ষ রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, "আনিসুল হক একজন প্রবীণ ব্যক্তি ও দেশের সাবেক মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে কোনো নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং তাকে জামিন দেওয়া হোক।" তবে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আদালতের কাছে তা মঞ্জুরের অনুরোধ জানায়।
আদালতের বিচারক দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক শোনার পর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফলে আবারও র্যাব হেফাজতে পাঠানো হলো সাবেক এই মন্ত্রীকে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এরপর ১৩ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আনিসুল হককে। তখন থেকেই একের পর এক মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় তার মোট রিমান্ডের মেয়াদ দাঁড়িয়েছে ৫৮ দিন। নতুন করে ২ দিন রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ায় এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৬০-এ।
আনিসুল হকের পরিবার ও রাজনৈতিক সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক উদ্দেশ্যেই তাকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং তদন্ত স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, সরকার পরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাবেক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা মনে করেন, এটি হয়তো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
রিমান্ড চলাকালীন আনিসুল হকের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখার দাবি তুলেছে তার পরিবার। তারা বলেছে, একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা বা বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালতে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করবেন।