বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বিসিবি নির্বাচনকে ‘কালো দাগ’ আখ্যা দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বিকেলের ফ্লাইটে দেশ ছাড়ার আগে তিনি জানান, স্বচ্ছতার অভাবে আজ ক্রিকেট হেরে গেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলের ফ্লাইটে তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুপুরে টেলিফোনে তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তামিম বলেন, “আমি বিকেলের ফ্লাইটে দেশের বাইরে যাচ্ছি। আমার অনুরোধ থাকবে—ক্রিকেটকে বাঁচানোর জন্য আপনারা যেন এই অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। আপনারা সবাই জানেন এই নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে। যদি মনে করেন আমি যা বলেছি তা সত্যি, তবে সেটার প্রতিবাদ করুন।”
এর আগে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা গুঞ্জন শেষে বুধবার দুপুরে তিনি নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এরপর গণমাধ্যমে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, এই নির্বাচন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক ‘কালো দাগ’ হয়ে থাকবে।
প্রায় ১৪ থেকে ১৫ জন প্রার্থী একইদিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন তামিম। তাঁর ভাষায়, “আপনারা জানেন, আজকে আমরা আমাদের নমিনেশনটা প্রত্যাহার করেছি। আমিসহ আরও প্রায় ১৪-১৫ জন এটা করেছি। কারণটা খুবই পরিষ্কার। আমি শুরু থেকেই বলে আসছি, এই নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে তা আপনারা সবাই এখন পরিষ্কার।”
বিসিবি নির্বাচনে স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং প্রভাবশালী মহলের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তামিমের ভাষায়, “যারা বোর্ডে আছেন তারা যদি এভাবেই নির্বাচন করতে চান, তবে করুন। জিততেই পারেন। কিন্তু আজ ক্রিকেট হেরে গেছে।”
তামিমের এই বক্তব্য শুধু ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেই নয়, সাধারণ ক্রীড়ামোদীদের মধ্যেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, তামিমের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারের এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিম ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি শুধু দেশের জন্য অসাধারণ ইনিংস উপহারই দেননি, বরং মাঠে ও মাঠের বাইরে থেকেও সবসময় দল এবং ক্রিকেটের পাশে থেকেছেন। সেই তামিম যখন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘কালো দাগ’ আখ্যা দিয়ে বিদায়ের বার্তা দেন, তখন বোঝা যায় দেশের ক্রিকেটে অভ্যন্তরীণ সংকট কতটা গভীর।
তামিমের হঠাৎ দেশত্যাগ এবং বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রিকেট ভক্তরা এখন তাকিয়ে আছেন—এবারের নির্বাচন শেষে আসলে ক্রিকেট কোন পথে হাঁটবে। তামিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের ক্ষোভ, সমালোচনা এবং প্রতিবাদকে কি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে, নাকি আবারও ব্যক্তিস্বার্থের কাছে হেরে যাবে জাতীয় খেলার স্বপ্ন—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা একদিকে তামিমের বিদায়ে হতাশ, অন্যদিকে বিসিবির ভবিষ্যৎ পরিচালনা নিয়ে শঙ্কিত। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার—আজকের দিনটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যেদিন দেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটার ঘোষণা দিলেন, “আজ ক্রিকেট হেরে গেছে।”