নাটোরের গুরুদাসপুরে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে করা মামলার নাম প্রত্যাহারের শর্তে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) কর্তৃক ঘুষ দাবি করার ঘটনা আলোড়ন তুলেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে, এবং প্রবাসী মহলে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও দেশে তার দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারে। হঠাৎ করেই তিনি একটি মারামারির মামলায় প্রধান আসামি হয়ে যান, যদিও ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিতই ছিলেন না—কারণ তিনি তো দেশেই ছিলেন না!
ঘটনার সূত্রপাত ১৫ মে, যখন চাঁচকৈড় বাজারে ইটভাটা ব্যবসায়ী ফরিদ মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লাকে কিছু দুর্বৃত্ত মারধর করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাসেল হোসাইনের প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী। পরদিন ১৬ মে রুবেলকে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ফরিদ মোল্লা, আর এতে ১ নম্বর আসামি হিসেবে উঠে আসে আমেরিকায় থাকা রাসেল হোসাইনের নাম!
মামলাটির তদন্ত ভার পান গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধা।
মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকেই এসআই আবু জাফর নিয়মিত রাসেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া শুরু করেন এবং কথা বলেন তার ম্যানেজার গোলাম রাব্বির সঙ্গে। ২ জুন সোমবার, এসআই সরাসরি ফোন করে জানিয়ে দেন, প্রবাসী রাসেলের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে হলে দিতে হবে ৫ লাখ টাকা ঘুষ, যার মধ্যে ঈদের আগেই দিতে হবে এক লাখ টাকা!
এমন ভয়ংকর ঘুষ দাবির কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছেন রাসেলের ম্যানেজার এবং সরাসরি অভিযোগ করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে।
রাসেল হোসাইন, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বলেন—
“আমি বহু বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করি। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন গোলাম রাব্বি। অথচ একটি মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়িয়ে প্রধান আসামি করা হয়েছে! মামলার তদন্তকারী এসআই আবু জাফর আমার ম্যানেজারকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন—এই অন্যায় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?”
তিনি আরও বলেন,
“আমি সরকারের কাছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে ও সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করছি—এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এসআই আবু জাফরের মতো দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
অভিযুক্ত এসআই আবু জাফর মৃধা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এসব ভিত্তিহীন।”
এদিকে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হকও বলেন,
“মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের শর্তে ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি।”
তবে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান,
“এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনাটি আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কীভাবে কোনো একজন প্রভাবশালী প্রবাসীও দুর্নীতির ফাঁদে আটকা পড়তে পারেন। একজন যিনি দেশে নেই, অথচ মিথ্যা মামলায় তার নাম, তার ব্যবসার ক্ষতি, তার মানসম্মানের অবনমন—সবই এখন ‘ঘুষ’-নির্ভর!
প্রশ্ন থেকেই যায়—এই অভিযোগ সত্য হলে সেই এসআইয়ের ভবিষ্যৎ কী? এবং এরকম ঘুষের ঘটনা যদি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে, তবে তাদের প্রতিকার কোথায়?
প্রবাসী রাসেলের মতো মানুষেরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ এমন আচরণ ও ঘুষের দাবির ঘটনায় তারা হতাশ, ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত। যদি এই ঘটনা প্রমাণিত হয়, তবে এসআই আবু জাফরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার—যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে না পারে।