close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নাই: ড. ইউনূস

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাপানে নিক্কেই ফোরামে বক্তব্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই তার। জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতেই চান তিনি। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, সংস্কারের স্বার্থে জাতীয় নির্ব..

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত একটি সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তুলে ধরেছেন নির্বাচনের সময়সূচি, রাজনৈতিক অবস্থান এবং দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের রূপরেখা। ২৯ মে বৃহস্পতিবার, জাপানে আয়োজিত নিক্কেই ফোরাম ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "আমি কোনো রাজনীতিবিদ না, আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নাই।" এমন স্পষ্ট ঘোষণায় রাজনীতির মাঠে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। কিন্তু এত দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করলে প্রয়োজনীয় সংস্কারে তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে। তার মতে, "সংস্কার কার্যক্রম ভালোভাবে করতে হলে আরও অন্তত ছয় মাস সময় দরকার।"

তিনি এও জানান, সরকার ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি আরো বৃহত্তর সংস্কারের দাবি তোলে, তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এই সময় তিনি স্পষ্ট করেন, নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ সব রাজনৈতিক দলের নয়, বরং "শুধু একটি দলের।"


স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি

নিক্কেই ফোরামে দেয়া তাঁর বক্তব্যে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, "মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতেই গণতন্ত্রের মসৃণ রূপান্তর প্রয়োজন।"

বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে "জনগণের ক্ষমতায়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।"


বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থান

ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, "বিশ্বজুড়ে সংঘাতের সূত্রপাত হচ্ছে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হাজার হাজার মানুষের জীবন ধ্বংস হচ্ছে।" তিনি যুদ্ধের বিপরীতে শান্তির পক্ষে জোরালো বার্তা দেন এবং যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত মানবিক সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, "যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে, আর এতে লাখ লাখ মানুষ মৌলিক চাহিদার জন্য লড়াই করছে।" মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধকে তিনি উল্লেখ করেন "নৃশংস" হিসেবে এবং বলেন, "সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এরমধ্যেই মানবিক সংকটকে আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।"

প্রতিবেশী যুদ্ধ ও শান্তির বার্তা

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। একটি "সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধ" শেষ হওয়ার পর উভয় দেশের শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোয় তাদের নেতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, "দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই।"

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলো যেন "দ্বন্দ্ব নয়, সহযোগিতাকে বেছে নেয় এবং শূন্য-সমষ্টিগত প্রতিযোগিতার বদলে যৌথ সমৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করে।"

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকনির্দেশনাই দেয়নি, বরং এটি ছিল একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তাঁর কথা থেকে স্পষ্ট যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির চেয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবিকতার প্রশ্নে বেশি উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের তাড়াহুড়ো নয়, বরং একটি বিশ্বাসযোগ্য, সর্বজনগ্রাহ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তিনি দেশকে এগিয়ে নিতে চান — এটাই ছিল তাঁর মূল বার্তা।

לא נמצאו הערות