close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আলী খামেনিই, হযরত আলী (রাঃ) এর বংশধর যেভাবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হলেন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কেবল একজন রাজনীতিক নন—তিনি এক আদর্শিক বিপ্লবী, যিনি হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশধর হয়ে ধর্ম, ত্যাগ ও ন্যায়ের পথ বেছে নিয়েছেন। সাধারণ জীবন থেকে উঠে এসে কীভাব..

ইতিহাসে কিছু মানুষ জন্মান নেতৃত্বের জন্য, আবার কেউ নিজেকে ইতিহাসে গড়েন সংগ্রাম আর আত্মত্যাগ দিয়ে। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, এমনই এক ব্যক্তিত্ব যিনি কেবল একটি রাষ্ট্র নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

১৯৩৯ সালে ইরানের মাশহাদ শহরে জন্ম নেওয়া খামেনির পরিবার ছিল অত্যন্ত সাধাসিধে। তার পিতা ছিলেন একজন ইসলামী পণ্ডিত—আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ হোসাইনী খামেনি। 'হোসাইনী' নামটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এক ঐশ্বরিক পরিচয়—এই বংশধররা হযরত আলী (রাঃ) ও ফাতেমা (রাঃ)-এর সরাসরি উত্তরসূরি। অর্থাৎ, তিনি ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর রক্তধারা বহনকারী। এই রক্তেই ছিল ত্যাগ, সাহস আর আদর্শের শক্তি।

তার ছোটবেলা কেটেছে অভাবের মাঝেই। কিছুদিন এমনও গেছে যখন তাদের বাড়িতে পর্যাপ্ত খাদ্য ছিল না। কিন্তু পরিবারে নৈতিক শিক্ষা, আত্মসংযম এবং ধর্মীয় আদর্শের কোনো ঘাটতি ছিল না। খুদে খামেনি খুব অল্প বয়স থেকেই ইসলামিক দর্শন, কুরআন তাফসির ও আরবি সাহিত্যে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

১৯৭০-এর দশকে ইরান যখন রাজতন্ত্র, পশ্চিমা উপনিবেশবাদ ও শাহ রেজা পাহলভির স্বৈরশাসনে ন্যস্ত, তখন শুরু হয় এক ঐতিহাসিক আন্দোলন—ইসলামী বিপ্লব। ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই বিপ্লবে খামেনি ছিলেন অগ্রগামী। তিনি গোপনে আন্দোলন সংগঠিত করতেন, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেন, বিতরণ করতেন বিপ্লবী লিফলেট। তার কাজের কারণে একাধিকবার জেল খেটেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

একবার একটি মসজিদে বোমা হামলায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তার ডান হাত স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে যায়। কিন্তু তাতে তিনি দমে যাননি—বরং আরও দৃঢ়চিত্তে বিপ্লব চালিয়ে যান।

ইসলামী বিপ্লবের সফলতার পর ইরানে ঘটে যায় নতুন ইতিহাস। ১৯৮۰ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হলে খামেনিকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিহাসে তিনিই প্রথম আলেম যিনি একটি আধুনিক রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন সময়েও তার নেতৃত্বে ইরান মাথা নোয়ায়নি। সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন, জনগণের মনোবল ধরে রাখা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইরানকে টিকিয়ে রাখা ছিল তার কৃতিত্ব।

১৯৮৯ সালে ইমাম খোমেনির মৃত্যু হয়। দেশজুড়ে শোকের পরিবেশে ইরান একটি নতুন নেতার সন্ধানে থাকে। সে সময় সর্বসম্মতিক্রমে আলী খামেনিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা, অর্থাৎ সুপ্রিম লিডার ঘোষণা করা হয়। এটি ছিল ইতিহাসের আরেক মাইলফলক—একজন আলেম, বিপ্লবী এবং ফকীহ দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।

সুপ্রিম লিডার হিসেবে তার ক্ষমতার পরিধি বিশাল। সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, পরমাণু কর্মসূচি, সংসদ—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়ে থাকেন। তবে যে বিষয়টি মানুষকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে তা হলো—তার সরল জীবনযাপন। বিলাসিতা, চাকচিক্য, রাজকীয়তা থেকে শতভাগ দূরে থাকেন তিনি। সাধারণ পোশাকে, সাধারণ বাড়িতে, প্রতিদিন কুরআন পাঠ এবং নিয়মিত নামাজ—এটাই তার জীবনচর্চা।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিনি আমেরিকা ও ইসরায়েলের চোখে একজন “কঠিন প্রতিপক্ষ”। বহুবার নিষেধাজ্ঞা, চাপ ও হুমকির মুখেও তিনি ইসলামি মূল্যবোধ ও ইরানের স্বার্থে আপস করেননি।

আজ তিনি শুধু ইরানের নয়, বরং গোটা মুসলিম উম্মাহর চোখে একজন সাহসী, ন্যায়পরায়ণ ও ঈমানদার নেতা। হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশ থেকে উঠে আসা এই মানুষটি প্রমাণ করেছেন—আসল নেতৃত্ব আসে আদর্শ থেকে, পদ নয়।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator