প্রজ্ঞাপন জারি না হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত দাখিলসহ সব পরীক্ষা ও ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দেশজুড়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। যৌক্তিক দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না হলে আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রাজধানী থেকে শুরু হবে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি। এ ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “আমরা সরকারের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছি, তবে প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ চাই না। এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের জীবনের শ্রম, ঘাম ও আবেগ জড়িত। তাই কোনো উসকানিমূলক কাজ করব না। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেই আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করব।”
এর আগে বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করে হাজারো শিক্ষক। এরপর তারা শাহবাগ মোড়ে অবরোধ গড়ে তুললে রাজধানীর ব্যস্ত এই এলাকায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা, এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা ঘোষণা।
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। দাখিল পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বোর্ডের চলমান পরীক্ষা স্থগিতেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না। তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে শহীদ মিনার থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলার স্কুল-কলেজে।
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মাঠে নামিনি। এটি আমাদের জীবন ও জীবিকার লড়াই। সরকার যদি আজকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না দেয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মার্চ টু যমুনা’ অনুষ্ঠিত হবে।”
শিক্ষকরা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’। তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে ভাতা বৃদ্ধি এবং সর্বজনীন বদলি নীতি বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়েছেন।
গত রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর থেকেই শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকেই লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
রাতভর খোলা আকাশের নিচে থেকে শিক্ষকরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। কেউ প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে, কেউ ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে রাত কাটান। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকরা সংহতি প্রকাশ করেন এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান।
অন্যদিকে, সারাদেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন না। তারা শিক্ষক লাউঞ্জ ও অফিস কক্ষে বসেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আন্দোলন এখন শিক্ষক সমাজের সম্মিলিত চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি একটাই— “প্রজ্ঞাপন দিন, শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন।”