ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী নূর ইসলাম সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আজীবনের জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন। মিটফোর্ডে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার ভিডিও দেখেই তার এই সিদ্ধান্ত।
আজীবনের জন্য ছাত্রদল ও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নূর ইসলাম!
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নূর ইসলাম শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি বিস্ময়কর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, তিনি আজীবনের জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে নিচ্ছেন। তার এই সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়।
নূর ইসলাম ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী এবং দীর্ঘদিন ধরে শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
তিনি লেখেন, “আমি আজীবনের জন্য ছাত্রদল এবং বিএনপির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলাম। দলের কোনো দায়ভার আমি নিতে চাই না। তাই রাজনৈতিক কারণে কারো সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।”
নূর ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এক অমানবিক ঘটনার ভিডিও তার মনে প্রবল আঘাত হানে। ভিডিওটি দেখে তিনি গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন এবং দলীয় অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক আদর্শ মানে যদি হয় চোখ বন্ধ করে অন্যায়কে মেনে নেওয়া, তাহলে সেই আদর্শে আমার কোনো স্থান নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পুরো পরিবার বিএনপি করে। আমি নিজেও ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু এখন যে অবস্থান, তাতে থেকে আমি নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি না। যখন কেউ আমাকে প্রশ্ন করে—তোর দল এই করেছে, সেই করেছে—তখন আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। দলের প্রতি আমার কোনো লোভ-লালসা নেই। আমি একটি স্বচ্ছ জীবন চাই।”
নূরের ঘোষণার পর তার ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই তার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এই ঘটনায় কিছুটা বিভ্রান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, “কোনো কর্মী ফেসবুকে ছাত্রদল-বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে কিনা আমি জানি না। যদি করেও থাকে, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সে আসলেই ছাত্রদল করতো কিনা সেটাও যাচাইয়ের বিষয়। হতে পারে সে ছাত্রলীগ করতো বা কোনো গুপ্ত সংগঠনের অংশ ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এমন কোনো পোস্ট দেখিনি। এখন অনেকেই নিজের সুবিধামতো সংগঠন বদলায় বা পোস্ট দেয়। যারা প্রকৃতভাবে রাজনীতিতে আদর্শ নিয়ে যুক্ত থাকে, তারা এমন কাজ করে না।”
নূর ইসলামের এই ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে—বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে ছাত্রদের ভাবনা কতটা গভীর ও বিবেকনির্ভর? অনেকেই মনে করছেন, এটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং তরুণদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের বিতৃষ্ণা ও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতিতে আদর্শচ্যুতি, ভণ্ডামি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার তরুণদের হতাশ করছে। তারা স্বাধীন চিন্তা করতে চায়, অন্যায় মেনে নিতে চায় না। নূর ইসলামের মতো আরও অনেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা নেয়ার কথা ভাবছেন।
তবে নূরের মতো ছাত্ররা যদি আদর্শের জায়গা থেকে অবস্থান নেয়, তাহলে রাজনীতি নতুন এক চেহারা পেতে পারে বলেও মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।