close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আইয়ুব খানের পর পাকিস্তানের ‘ফিল্ড মার্শাল’ হলেন আসিম মুনির..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রায় ছয় দশক পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে আবারও ফিল্ড মার্শাল পদ পুনরায় ফিরে এলো। সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির পেলেন এই পাঁচ তারকা মর্যাদা, যা শুধুমাত্র অতুলনীয় কৌশলগত দক্ষতা ও জাতীয় নিরাপত্তায় বীর..

৬ দশক পর পাকিস্তানে আবার ‘ফিল্ড মার্শাল’: জেনারেল আসিম মুনির পেলেন ইতিহাসের সবচেয়ে সম্মানজনক সামরিক পদ

পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মুহূর্ত তৈরি হলো আজ। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ ও অত্যন্ত সম্মানজনক পদ। প্রায় ৬০ বছর পর দেশটিতে আবারও কাউকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো।

মঙ্গলবার (২১ মে) প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় এবং বহির্বিশ্বের হুমকির মুখে পাকিস্তানকে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।”

বীরত্বের সম্মান, সামরিক ইতিহাসে দ্বিতীয়বার

এই পদোন্নতি পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এর আগে একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদ ধারণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার পর তিনি নিজেকে এই পদে উন্নীত করেন।

কিন্তু জেনারেল আসিম মুনিরের ক্ষেত্রে এই পদোন্নতি এসেছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুমোদন ও জাতীয় স্বার্থে তাঁর অসাধারণ কৌশলগত নীতিনির্ধারণের জন্য। মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, আসিম মুনিরের অধীনে সাম্প্রতিক ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার সময় সেনাবাহিনীর কৌশল এবং দৃঢ় অবস্থান পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বড় ভূমিকা রেখেছে।

পাঁচ তারকা মর্যাদার প্রতীক: কী এই ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদ?

‘ফিল্ড মার্শাল’ একটি আনুষ্ঠানিক ও পাঁচ তারকা সামরিক পদমর্যাদা, যা বিশ্বজুড়ে কেবলমাত্র অসাধারণ সামরিক অবদানের জন্য দেওয়া হয়। এটি যেকোনো সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান। এই পদ সাধারণত যুদ্ধকালীন সময়ে জয়লাভ বা দুর্ধর্ষ নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়ে থাকে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এটি কেবল একটি পদ নয়, বরং একজন নেতার প্রতি জাতীয় কৃতজ্ঞতা ও গর্বের প্রতীক।”

সেনাপ্রধান হিসেবেই দায়িত্বে থাকবেন আসিম মুনির

যদিও ফিল্ড মার্শাল পদ সাধারণত অবসরের প্রাক্কালে প্রদান করা হয়, তবে জেনারেল আসিম মুনির তাঁর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে বহাল থাকবেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। এর ঠিক এক বছর পর, একটি আইনি সংশোধনের মাধ্যমে তাঁর মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, সম্ভবত তাঁকে অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু বাস্তবে ঘটলো ঠিক তার বিপরীত— তাঁকে দেওয়া হলো পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সম্মান।

আসিম মুনির: সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া

সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জেনারেল আসিম মুনির বলেন,
“এটি কোনো ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এটি পুরো পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এবং ২৩ কোটির অধিক পাকিস্তানি নাগরিকের সম্মান। এই সম্মান আমাকে আরো দায়িত্ববান করেছে, যাতে আমি আমার দেশকে আরও নিরাপদ, সংহত ও শক্তিশালী করতে পারি।”

বিমানবাহিনীর প্রধানের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে

একই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল জাহির আহমেদ বাবর সিধুর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। যদিও তাঁর মেয়াদ ঠিক কতদিন বাড়ানো হয়েছে বা এর কোনো নির্ধারিত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, সাম্প্রতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সরকার চাইছে অভিজ্ঞ সামরিক নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে রেখে এক ধরনের স্থায়িত্ব বজায় রাখতে।


 ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়

জেনারেল আসিম মুনিরের ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে পদোন্নতি শুধু একটি পদ পরিবর্তন নয়— এটি পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে নেতৃত্বের স্বীকৃতি এসেছে সাহস, কৌশল এবং রাষ্ট্রের প্রতি অটল দায়িত্ববোধের মাধ্যমে।

এখন দেখার বিষয়, এই পদোন্নতির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, এবং জেনারেল মুনির ভবিষ্যতে কীভাবে তাঁর এই নতুন দায়িত্ব পালন করেন।

コメントがありません