close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আহ্বানে সাড়া না পেয়ে বিষপান: চোখ হারানো ৪ তরুণের আত্মহননের চেষ্টা জাতিকে নাড়া দিল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো চার তরুণ রোববার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চলমান বৈঠকের মাঝে বিষপান করেন। সরকারের নীরবতা ও চিকিৎসা অবহেলার প্রতিবাদে তারা এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেন বলে অভিযোগ। বর্তমান..

চোখ হারিয়ে শুধু আলো নয়, হারালেন জীবনের স্বপ্নও—তাই বিষপান করে প্রতিবাদের চূড়ান্ত রূপ দেখালেন জুলাই আন্দোলনের আহত চার তরুণ।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে বিষপান করেন তারা। হাসপাতালের ভেতরেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বিষপান ঘটনার সূত্রপাত হয়, যা মুহূর্তেই দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এই চার তরুণই গত বছরের জুলাই-আগস্টের সময় অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিক্ষিপ্ত টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে চোখ হারান। তখনকার সেই উত্তাল আন্দোলনে তারা ছিলেন সম্মুখ সারির প্রতিবাদী কণ্ঠ, যারা আজ সরকারি অবহেলায় জীবন সংকটে।

বিষপানের মুহূর্ত:

ঘটনার দিন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের কক্ষে একটি বৈঠক চলছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন 'জুলাই ফাউন্ডেশন'-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বৈঠকের মাঝেই আহত চার তরুণ তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য কক্ষে প্রবেশ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তারা কথা বলতে চাইলেও সিইও তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। এই ‘অপেক্ষার নির্দেশ’ যেন তাদের নয় মাসের হতাশা ও অবহেলার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ চার তরুণ পকেট থেকে বিষ জাতীয় দ্রব্য বের করে পান করে ফেলেন। চারদিকের মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।

চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা:

ঘটনার পরপরই দ্রুত চারজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান জানিয়েছেন, “চারজনকেই দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা শুরু করেছি। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত অবস্থায় রয়েছেন।”

দীর্ঘ দিনের অবহেলা ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ:

চোখ হারানোর পর থেকেই চার তরুণ উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং সরকারি সহায়তার আশায় অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাসেও সরকার বা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসার ব্যয়, মানসিক সংকট, কর্মহীনতা—সব মিলিয়ে তারা পড়ে যান গভীর হতাশায়।

একজন আহত তরুণের পরিবার জানিয়েছে, “প্রতিদিন আমরা সরকারের সহানুভূতির জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তারা যেন ভুলে গেছে, এই তরুণেরা তাদের অধিকার চাইতেই রাস্তায় নেমেছিল।”

জুলাই যোদ্ধাদের হুঁশিয়ারি:

এই ঘটনার পরপরই 'জুলাই যোদ্ধা' ব্যানারে এক জরুরি ব্রিফিং ডাকা হয়। ব্রিফিংয়ে নেতারা বলেন, “এই চার তরুণের যদি কিছু হয়, তবে দেশজুড়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের নিরবতা আমাদের বাধ্য করেছে এমন আত্মঘাতী পথ বেছে নিতে।”

তারা আরও জানান, “আমরা বারবার চেয়েছি সংলাপ, চেয়েছি সহানুভূতি। কিন্তু রাষ্ট্র শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কাজ কিছুই করেনি। এখন যদি রাস্তায় আগুন জ্বলে ওঠে, দায় সরকারকেই নিতে হবে।”

প্রতিক্রিয়া:

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। সাধারণ নাগরিক, অধিকারকর্মী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যারা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চোখ হারিয়েছে, তাদের প্রতি এ ধরনের অবহেলা ‘অমানবিক’ এবং ‘অপরাধমূলক’।

 

এই ঘটনা আরও একবার মনে করিয়ে দিল, প্রতিবাদীদের জন্য শুধু চোখ হারানো নয়, কখনও কখনও আত্মা হারানোও অনিবার্য হয়ে ওঠে, যদি রাষ্ট্র তাদের দেখার দায়িত্ব না নেয়। একটি সভ্য সমাজে এটি কতটা লজ্জার বিষয়, তা ভাবার সময় এখনই।

نظری یافت نشد