চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সরকার গড়ে ওঠে, অথচ পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোটের যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত হয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি সরাসরি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হতে হবে। তার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত যে ভোট প্রক্রিয়া চলছে, সেটি কেবলমাত্র ক্ষমতাধর দলের স্বার্থ রক্ষা করছে এবং দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে একনায়কতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় শরীয়তপুর জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ইসলামী যুব আন্দোলন আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। সেখানে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে চরমোনাই পীর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন।
চরমোনাই পীর বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির কারণে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। তিনি অভিযোগ করেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বারবার “ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সরকার” তৈরি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই প্রক্রিয়ায় দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হয় এবং দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমননীতি বেড়ে যায়। তার মতে, যদি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তাহলে প্রতিটি ভোটারের ভোট গুরুত্ব পাবে এবং প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সংসদ গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে কোনো খুনি, চাঁদাবাজ বা দুর্নীতিবাজরা টিকে থাকতে পারবে না। বরং প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা সংসদে তাদের জনস্বার্থের কথা বলবে। তখন রাষ্ট্র হবে সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ। এটা শুধু আমাদের কল্পনা নয়, বরং একটি বাস্তবতা।”
পিআর পদ্ধতির সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি জানান, “বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। কোনো দেশই এর বাইরে যায়নি। তাহলে কেন বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে? আমাদের বুঝতে হবে এটি সর্বজনীন কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গেও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ক্ষমতায় এসে তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু জনগণ দেখেছে, দৃশ্যমান সংস্কার বা বিচার না করেই নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, আপনাদের ওপর অজানা এক প্রভাব কাজ করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের জমিনে আর কোনো মায়ের কোল খালি হতে দেব না।”
সমাবেশে ইসলামী যুব আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ তারেক জামিল সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মাহমুদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজিজুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলা সভাপতি এস এম আহসান হাবিব।
চরমোনাই পীরের এ বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার এ প্রস্তাব বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—বাংলাদেশের মানুষ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। তাই সামনে আসছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।