close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

আগামী বছরের ডিসেম্বরে পাতাল রেলে চড়বেন ঢাকাবাসী

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০২৬ সালের ডিসেম্বরেই ঢাকাবাসী পাতাল রেলের যাত্রী হবেন—সরকারের এমন ঘোষণা আলোচনায় থাকলেও, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সময়মতো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণ বিলম্ব হলে বাড়বে বাজেটও। জেনে নিন ..

ঢাকায় পাতাল রেলের স্বপ্নপূরণ কতটা বাস্তব? সময়মতো শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় যানজট যখন নিয়মিত যন্ত্রণার নাম, তখন পাতাল রেল প্রকল্প নগরবাসীর মনে স্বস্তির পরশ নিয়ে আসে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরেই ঢাকা শহর পাবে দেশের প্রথম পাতাল রেল। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ও নানাবিধ জটিলতা দেখে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তৈরি হয়েছে একধরনের শঙ্কা। প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি বাস্তবায়নযোগ্য সময়সীমা, নাকি কেবল কাগুজে পরিকল্পনার ফাঁদ?

প্রকল্প শুরু হয়েছিল আশাবাদ নিয়ে, ধাক্কা দেয় বাস্তবতা

২০১৯ সালের অক্টোবরে এমআরটি লাইন-১ নামের এই বিশাল প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর লক্ষ্য ছিল রাজধানীকে একটি আধুনিক, দূষণমুক্ত ও যানজটমুক্ত শহরে রূপান্তর করা। কিন্তু পরের বছরই করোনাভাইরাস মহামারি এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা তৈরিতে দেখা দেয় ধীরগতি, ফলে প্রথম ঠিকাদার নিয়োগ দিতেই লেগে যায় তিন বছর।

অবশেষে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রূপগঞ্জের পীতলগঞ্জ এলাকায় পাতাল রেলের ডিপোর জমি উন্নয়নে চুক্তি হয় জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এই ভূমি উন্নয়নকাজ বর্তমানে প্রায় সম্পন্ন হলেও প্রকল্পের মূল কাঠামো নির্মাণ এখনো শুরু হয়নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মূল কাজের দরপত্র আগামী ২১ জুলাই উন্মুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমেই শুরু হবে প্রকল্পের বাস্তব নির্মাণধাপ।

ডিএমটিসিএল বলছে—সময়ের মধ্যে শেষ করতে বদ্ধপরিকর, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূইয়া জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। অর্থায়নের কোনো সমস্যা নেই বলেও দাবি তার। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কিছু।

প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজে জড়িত এক প্রকৌশলী বলেন, “যেভাবে কাজ এগোচ্ছে, তাতে দেড় বছরের মধ্যে এত বড় একটি প্রকল্প শেষ হওয়া অসম্ভব। এটা এক ধরনের কল্পনাপ্রসূত চিন্তা।” প্রকল্পের মূল কাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু না হতেই সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া কঠিন বলেই মত সংশ্লিষ্টদের।

ঠিকাদার নিয়োগেই দীর্ঘসূত্রিতা, সময়ের চেয়ে পিছিয়ে প্রকল্প

৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য এখন পর্যন্ত ১২টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর প্রক্রিয়া এখনো চলমান। ডিএমটিসিএল আশাবাদী যে, ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সব ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—এমন বড় প্রকল্পে মূল কাজ শুরু হওয়ার আগে পরিকল্পনা, অনুমোদন, সরঞ্জাম আনা, জনবল নিয়োগসহ অনেক ধাপ রয়েছে, যা সময়সাপেক্ষ। অনেকেই মনে করছেন, কাজ শুরু হলেও ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্প শেষ করতে আরও তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেট্রোরেল লাইন-১: কী থাকছে, কীভাবে চলবে?

এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত পাতালপথে এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে নির্মাণ হবে। পুরো রুটের দৈর্ঘ্য ৩১.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৯.৮৭ কিলোমিটার হবে পাতাল রেলপথ এবং ১১.৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল রেলপথ।

প্রকল্পে মোট ১৯টি স্টেশন থাকবে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে বাংলাদেশের পরিবহন খাতের সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামোগত উদ্যোগ। এতে যানজট কমবে, বায়ু দূষণ হ্রাস পাবে এবং যাত্রীসেবায় আসবে আমূল পরিবর্তন।

সময়ের মধ্যে শেষ না হলে কী হবে?

সময়সীমা পেরিয়ে গেলে প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশার চাপও বাড়বে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ওপর। এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, কারণ এটি সরকারের একটি মেগা প্রকল্প।

শেষ কথা: আশার আলো আছে, তবে বাস্তবতাকে ভুলে গেলে চলবে না

পাতাল রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার ও ডিএমটিসিএল একপ্রকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে বাস্তবতা হলো, এত বড় ও জটিল প্রকল্প সময়মতো শেষ করতে হলে প্রয়োজন দ্রুততা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ পরিচালনা।

২০২৬ সালের ডিসেম্বরেই ঢাকা শহরে পাতাল রেলে চড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কি না, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে এখনই এটি ঘিরে জনমনে তৈরি হয়েছে সংশয় আর উত্তেজনার মিশ্র অনুভূতি।

לא נמצאו הערות


News Card Generator