চলতি জুলাই মাসে দেশের আবহাওয়া রীতিমতো বৈচিত্র্যময় হতে যাচ্ছে। একদিকে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস, অন্যদিকে দেশের কিছু অঞ্চলে বয়ে যেতে পারে মৃদু তাপপ্রবাহ। এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে একটি নিম্নচাপ, যা বড় ধরনের মৌসুমি দুর্যোগে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী পাঁচদিনে সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগেও হবে বজ্রসহ বৃষ্টি।
শুক্রবার থেকে বৃষ্টির মাত্রা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। শনিবারও দেশের প্রায় সব বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বজ্রসহ দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এই তিনদিনে (বৃহস্পতিবার-শনিবার) দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়ার এই বৈচিত্র্যের মাঝে দেশের কিছু জায়গায় ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে, যা মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর অঞ্চলে এ ধরনের তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, “জুলাইয়ে অন্তত একটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা সারা দেশের আবহাওয়ার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ থেকে ছয়দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রবণতা বাড়বে।
এছাড়া, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে, যা বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
জুলাই মাসের প্রথমার্ধে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির স্তর বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। জুন মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৯.৩% কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ঢাকায় কমেছে প্রায় ৩৩%। ফলে নতুন করে বৃষ্টি বাড়লে নদীভাঙনের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
গত শুক্রবার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের চারটি সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। তবে বুধবার রাতে সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরে এখন আর ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষজ্ঞ বজলুর রশীদ বলেন, “মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক প্রভাবেই বৃষ্টি হচ্ছে এবং তা আরও বাড়বে। আগামী পাঁচদিন একই ধারা চলবে।”
-
কক্সবাজার: সর্বোচ্চ ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি (বুধবার পর্যন্ত)
-
ঢাকা: মাত্র ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি
-
রংপুর ও সৈয়দপুর: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
সাধারণত আবহাওয়াবিদরা বৃষ্টির পরিমাণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেন:
-
১–১০ মিমি: হালকা বৃষ্টি
-
১১–২২ মিমি: মাঝারি
-
২৩–৪৩ মিমি: মাঝারি ধরনের ভারি
-
৪৪–৮৮ মিমি: ভারি
-
৮৮+ মিমি: অতি ভারি
এই জুলাই মাসে যারা কৃষিকাজ, ভ্রমণ বা বড় কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি না থাকলে হঠাৎ বজ্রপাত, ভারি বৃষ্টি বা তাপপ্রবাহ বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।