close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আ. লীগের শাসনামলে আ'ত'ঙ্কে দিন কেটেছে বিএনপি - জামায়াতকর্মীদের, অর্ধশত খু'ন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মেহেরপুরে ২০০৯-২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের অর্ধশতাধিক খুন, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ। ক্রসফায়ারের নাটক..

দীর্ঘদিন ধরে চরমপন্থি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মেহেরপুর জেলা, বিশেষ করে গাংনী, একসময় (১৯৯০-২০০০ সাল) ছিল আতঙ্কের জনপদ। অস্ত্রের ঝনঝনানি ও বোমাবাজিতে মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকত। তবে এই জনপদে ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে এলেও, আওয়ামী লীগের শাসনামলে (২০০৯-২৪) দিনদুপুরে খুন-খারাবির ঘটনা ফের ফিরে আসে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩-১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দমাতে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। ক্রসফায়ার, বোমা হামলা, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার মাধ্যমে বিরোধী দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে খুন করা হয়। শুধু তাই নয়, জামায়াত ও বিএনপি কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেহেরপুরে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করেছিল। জামায়াত এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পুলিশকে ব্যবহার করে। জামায়াত নেতারা জানান, তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মামলার অন্যায় রায়ের প্রতিবাদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দাবিতে তারা রাজপথে সোচ্চার ছিলেন। এই প্রতিবাদ দমনে পুলিশ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নেয়।

জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন ও মামলা

জামায়াতের দাবি অনুযায়ী, ২০১২ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে জামায়াতের মিছিলে পুলিশ সরাসরি গুলি করে তিন জামায়াতকর্মীসহ ১৫-২০ জনকে আহত ও নিহত করে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াত-শিবিরের এক হাজার নেতাকর্মীর নামে ৮৬টি মিথ্যা মামলা এবং কোরআন ক্লাস থেকে ধরে নিয়ে প্রায় ১০০ জন মহিলা ও ছাত্রীর নামে ১৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। নেতাকর্মীদের থানায় ও ডিবি অফিসে ধরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হতো। এমনকি জেলহাজত থেকে জামিন নিয়ে বের হলে ফের জেলগেট থেকে ধরে গ্রেপ্তার দেখানো হতো, অথবা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

পুলিশি হয়রানির কারণে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বাড়িছাড়া হতে হয় এবং রাতের পর রাত খোলা জায়গায় কাটাতে হয়। জামায়াত নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটপাট করার অভিযোগও আনা হয়েছে। জেলা জামায়াত সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন বলেন, জামায়াত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকেও নির্যাতন করা হয়েছে।

 

বিএনপির ওপর নিপীড়ন ও মিথ্যা মামলার চিত্র

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। ২০১৩-১৪ সালে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি মাসুদ অরুণের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী তুমুল আন্দোলন গড়ে উঠলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রশাসনের দমন-পীড়নের শিকার হন। তিনবার জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করা হয় এবং গণঅবরোধের সময় ১০২ জন নারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন গর্ভবতী ও ছোট শিশুর মা।

বিএনপির প্রায় চার হাজার নেতাকর্মীর নামে ১১২টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। বহু নেতাকর্মী একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। জামিন নিয়ে বের হলেও জেলগেট থেকে ফের তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে লুটপাট, জমি-জায়গা দখল এবং মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তারা।

 

ক্রসফায়ার নাটকে কেঁদেছিল মেহেরপুরবাসী: আলোচিত হত্যাকাণ্ড

 

মেহেরপুরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মো. সাইফুল ইসলামের তথাকথিত ক্রসফায়ার নাটকে হত্যা। মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার কথা ছিল এই জনপ্রিয় নেতার। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক থেকে কাজ সেরে নিচে নামার পর পুলিশ তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।

অভিযোগ করা হয়, মেহেরপুর-১ আসনের তৎকালীন আওয়ামী এমপি ফরহাদ হোসেন এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুলের নির্দেশে তাকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়। পুলিশ তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করলেও, পরে বামনপাড়া শ্মশানঘাটে রাতে তাকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়। তারিক হত্যাকাণ্ডে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হত্যাকাণ্ডের পর প্রশাসন ও আওয়ামী নেতাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।

 

সাবেক এসপি নাহিদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে মামলা

 

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তারিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য মামলা করা হয়। তারিকের ভাই তাওফিকুল ইসলাম ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর আমলি আদালতে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলামকে, যাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। সাবেক এসপি নাহিদুলকে ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মামলায় সাবেক এমপি ফরহাদ হোসেন দোদুলসহ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সাবেক এমপি ফরহাদ হোসেন এখন কারাগারে।

এছাড়াও, ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আটক হওয়ার পর সদর উপজেলার হিজুলি গ্রামের জামায়াত নেতা ও ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বারকেও ওই রাতেই ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তার ছেলে আব্দুল মালিথা বাদী হয়ে মেহেরপুর আমলি আদালতে মামলা করেন, যেখানেও তৎকালীন এসপি নাহিদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়।

 

বিএনপি-জামায়াতের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর হত্যাকাণ্ড

 

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আন্দোলন দমনে অনেককে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়।

  • শমসের মালিথা (সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি) ও ডা. হামিদুর রহমান হেলালকে (মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক) তাদের নিজ বাড়িতে ধারালো অস্ত্র ও বোমা ফাটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

  • মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আফসার উদ্দিন মেম্বার, বাগোয়ান যুবদল নেতা শরিফুল ইসলামকে নিজ বাড়িতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শরিফুলের মৃত্যুর খবরে তার পিতা স্ট্রোক করে মারা যান।

  • রাজনগর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রমজান আলী, গাংনী থানা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহিন আলম, বামুন্দি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আজিজুল হককে যৌথবাহিনী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তথাকথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করে।

  • গাংনী উপজেলা যুবদল নেতা লাভলু হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। কাজল মাহমুদকে বাজারে বসে চা খাওয়া অবস্থায় বোমা মেরে হত্যা করা হয়। মিলন বিশ্বাসকে ধানখোলা বাজারে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায়ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা অভিযুক্ত। জেলা জামায়াতের আমির আলহাজ মো. ছমির উদ্দিনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায়ও মামলা চলমান রয়েছে।

জেলা জামায়াতের আমির মওলানা তাজউদ্দিন খান বলেন, বিগত সরকারের সময় মেহেরপুরে রাজনৈতিক অবস্থা খুবই উত্তপ্ত ছিল এবং অসংখ্য নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন বলেন, আওয়ামী শাসনের ১৫ বছরে এভাবেই দিনের পর দিন চলে অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন।

לא נמצאו הערות


News Card Generator