নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনার ভয়াবহ চিত্র আবারও সামনে এলো। বন্দর উপজেলার হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় রোববার (২৯ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে জনসম্মুখে বস্ত্রহীন করে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ২২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা মুহূর্তেই দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মুকুলের পায়জামা ও পাঞ্জাবি ছিঁড়ে শরীরের বেশিরভাগ অংশই উন্মুক্ত। শুধু একটি আন্ডারপ্যান্ট পড়ে ছিলেন তিনি। আশপাশে থাকা উত্তেজিত জনতা তাকে “আওয়ামী লীগের দালাল” বলে গালিগালাজ করছিল। সেই সঙ্গে চলে শারীরিক নির্যাতন।
ঘটনাস্থল ছিল বন্দর উপজেলার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা। অভিযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ঠিকাদারি কাজ চালু করতে সেখানে যান মুকুল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মোটর চালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনের পক্ষে তিনি কাজটি শুরু করতে গেলে জনতা তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের দাবি, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েও তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেছেন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে জনতা তার ওপর চড়াও হয়, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং মারধর করে।
ঘটনার সময় মুকুলকে উদ্ধার করে পুলিশ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
আতাউর রহমান মুকুল গণমাধ্যমকে বলেন, আমি হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়োগের কাজের টেন্ডার পেয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে গিয়েছিলাম। এ সময় সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমানের লোকজন আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমার পায়জামা-পাঞ্জাবি খুলে ফেলে লাঞ্ছিত করে। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।
অন্যদিকে, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমান দাবি করেন, “আমি ঢাকায় ছিলাম। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে শুনেছি, এলাকাবাসী তাকে হেনস্থা করেছে। এই ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
এ বিষয়ে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, “একটি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত জনতা তাকে চড়-থাপ্পড় মারে এবং লাঞ্ছিত করে। তখন তাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে গালিগালাজ করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।”
স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি অপ্রীতিকর ঘটনা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের হতাশাজনক অবনতি এবং প্রতিহিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে একজন জনপ্রতিনিধিকে জনসমক্ষে এভাবে অপমান করার ঘটনা গণতন্ত্রের জন্যও অশনি সংকেত।
নিউজটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনীতির নামে প্রতিহিংসা আর হিংস্রতা—এই অপসংস্কৃতি সমাজে অস্থিরতা ও বিভক্তি তৈরি করছে। এ ঘটনা শুধু আতাউর রহমান মুকুলকে নয়, আমাদের গণতন্ত্র ও মানবিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।