close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আ.লীগ নিষিদ্ধের জন্য মাঠে নামতে হচ্ছে, এটা লজ্জাজনক

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এটি একটি ঐতিহাসিক ও আবেগঘন ‘শহিদি সমাবেশ’-এর বিবরণ, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের ক্ষোভ, বেদনা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।..

রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক হৃদয়বিদারক ও প্রতিবাদী “শহিদি সমাবেশ”, যেখানে উপস্থিত বক্তারা জুলাই অভ্যুত্থান, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার সঠিক বিচার এবং এই গণহত্যাগুলোর জন্য দায়ী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানান।

ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশ শুরু হয় শুক্রবার বিকাল ৩টার পর। শহিদ পরিবারের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা এতে অংশ নেন। সমাবেশটি পরিণত হয় এক তীব্র আবেগময় ও ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে গর্জে ওঠা প্ল্যাটফর্মে।

শহিদ পরিবারের আর্তনাদ: "আমার ছেলের বিচার কোথায়?"

সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন,

“এই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কেন আমাদের রাস্তায় দৌঁড়াতে হবে? একটি প্রহসন চলছে দেশে। নির্বাচন ও সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বিচার ছাড়া কোনো সংস্কার অর্থবহ নয়।”

যাত্রাবাড়ীতে নিহত শহিদ সাইমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,

“আমার সোনার ছেলেকে আন্দোলনের মাঠে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ঈদ আসলেও আমি ঈদ করতে পারিনি। আমার বুকটা শূন্য করে দিয়েছে। হাসিনাকে দেশে এনে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চাই — এটাই আমাদের আর্তনাদ।”

শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন,

“আমার ছেলেকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি যখন তার লাশ পাই, ওর পায়ে মাংস ছিল না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নইলে আমি ছাড়ব না। আমার এক সন্তান গেছে, দেশের হাজারো সন্তান এই বিচার আদায়ে প্রস্তুত।”

পিলখানার বেদনার স্মৃতি

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনূভা মাহা বলেন,

“আজও আমি জানি না আমার স্বামী কোথায়। যে লাশ দাফন করা হয়েছে, তা আমার স্বামীর নয়। ওইদিন হিন্দিভাষী তিনজন লোক আমার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার সন্তানদের কাপড় খুলে পরীক্ষা করেছিল ছেলে নাকি মেয়ে! এ লজ্জা, এ শোক আমি কেমন করে বইবো?”

রাজনৈতিক বক্তাদের বক্তব্য: "আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে"

সমাবেশে উপস্থিত আপ-বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন,

“একটি গণহত্যাকারী দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য জনগণকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে — এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন,

“নির্বাচন নয়, বিচার চাই। সংস্কারের আগে বিচার নিশ্চিত হোক। শহিদদের হত্যার বিচার ছাড়া বাংলাদেশে আর কিছু প্রাসঙ্গিক নয়।”

এবি পার্টির সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম-সহ বিভিন্ন নেতারা একই দাবিতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জনগণের বার্তা: "বিচার না হলে শান্তি নেই"

সমাবেশজুড়ে শহিদ পরিবারের হৃদয়বিদারক বক্তব্যে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। বহু পরিবার আজও জানে না, কোথায় কবর হয়েছে তাদের প্রিয়জনের। অনেকে নিজের সন্তানের লাশ পর্যন্ত পাননি।

এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতার একটাই দাবি —
বিচার হোক। জবাবদিহি হোক। গণতন্ত্রের নামে গণহত্যা বরদাশত নয়।

没有找到评论