close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আ. লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনঃ বিরতিতে শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েন হাসনাত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলন আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত বিরতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে বিরতির এই সময়ে শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক..

শাহবাগ এখন আর শুধু একটি মোড় নয়, বরং রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ রাজনীতির এক জ্বলন্ত কেন্দ্রবিন্দুতে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে সেখানে টানা চলেছে বিক্ষোভ, স্লোগান আর প্রতিবাদের ঝড়। শুক্রবার রাত গভীর হলেও, সেই উত্তাপ কমেনি একটুও। রাত ৩টার পর ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান সাদী আন্দোলনে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিলেও, শাহবাগ ছাড়েননি অনেকেই। কেউ আড্ডায় মগ্ন, কেউ আবার রাস্তাতেই ঘুমিয়ে পড়েন ক্লান্ত শরীরে। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো চিত্র ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায় শাহবাগ মোড়েই।

ওসমান সাদী মাইকে ঘোষণা করেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না দেখে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। তবে সকাল ৬টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। এরপর আবারও আন্দোলন শুরু হবে।” এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অংশগ্রহণকারী সরে গেলেও, অধিকাংশই রয়ে যান। কেউ পাটের বস্তা বিছিয়ে বসে পড়েন, কেউ কাঠের স্লিপারে শরীর এলিয়ে দেন।

আন্দোলনের বিরতির পূর্ব মুহূর্তে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী একটি বড় প্রজেক্টরে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে নানা তথ্যচিত্র। সেখানে প্রদর্শিত হয় পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরের ঘটনা, জুলাই বিপ্লব, আয়নাঘরের লোমহর্ষক কাহিনি, এমনকি মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ ও কথিত ‘ভাতের হোটেল’ বিষয়েও একটি বিশেষ ডকুমেন্টারি। প্রতিটি তথ্যচিত্রের মাঝে মাঝেই মাইকে বাজে বিপ্লবী গান, কবিতা ও আগুনঝরা স্লোগান।

এই আন্দোলনে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধারণ মানুষ, ছাত্র, এমনকি চাকরিজীবীরাও অংশ নেন। ইনকিলাব মঞ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করে, শনিবার সকাল থেকে এই আন্দোলনে আরও বেশি রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যাবে। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টিও তাদের মধ্যে নতুন প্রাণসঞ্চার করেছে।

এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত ৮ মে রাত ১০টায়, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা যমুনা ফিউচার পার্কের কাছে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। শুরুতে এটি ছিল এনসিপির একক উদ্যোগ। তবে পরবর্তীতে জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে।

শুক্রবারের জুমার নামাজের পর বড় ধরনের একটি সমাবেশ হয়, যার পর বিকেল ৪টার দিকে সবাই মিছিলসহ শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেয়। আন্দোলনটি স্বাভাবিক প্রতিবাদ থেকে ক্রমশই রূপ নিচ্ছে রাজনৈতিক দাবির মুখর এক গণআন্দোলনে।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ঘনীভূত হওয়া নানা অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ওপর দমন-পীড়ন—সব মিলিয়ে এই আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ এটিকে পরিণত করেছে সামাজিক আন্দোলনের মতো এক দৃঢ় অবস্থানে।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে, এটি শুধুই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়—এটি একটি ‘ব্যবস্থা বদলের লড়াই’। তারা বলছেন, “আমরা চাই স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, মুক্ত নির্বাচন, এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে সেই স্বপ্ন অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।”

শনিবার সকালে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা কতটা বিস্তৃত হয় এবং সরকারি মহল কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাই এখন জাতির নজরে।

Aucun commentaire trouvé