close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

আ.লীগ নি ষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অ বরোধ চলবে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগসহ সারাদেশে অব্যাহত বিক্ষোভ ও অবরোধ। এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি ও ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থ..

রাজধানীর শাহবাগ মোড় এখন উত্তাল আন্দোলনের নতুন কেন্দ্রবিন্দু। আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও তাদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধ আজও অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবির পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগ ছাড়বেন না।

এই আন্দোলন শুধু কোনো একক রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ নয়; এটি রূপ নিয়েছে সম্মিলিত একটি ফ্রন্টে। উপস্থিত আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, ইনকিলাব মঞ্চ ও জুলাই ঐক্যসহ একাধিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে শুরু হলেও আন্দোলন এখন পূর্ণাঙ্গ অবরোধে পরিণত হয়েছে। শাহবাগ মোড়ে তৈরি হয়েছে একটি অস্থায়ী মঞ্চ, যেখানে দিনরাত চলছে বক্তৃতা, স্লোগান ও দলীয় সংগীত। এলইডি স্ক্রিনে চলছে জুলাই অভ্যুত্থানের ভিডিওচিত্র, আর সঙ্গে সঙ্গে উঠছে নতুন স্লোগান—“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর, না হলে ব্লকেড হবে সারা দেশ।”

তিন দফা দাবি: কঠোর বার্তা আন্দোলনকারীদের

গতকাল সন্ধ্যা ৭:৩০টার দিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন:

১. আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
৩. ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।

এই দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে আরও অনেকে একই বার্তা ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাতেই এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের নেতা সারজিস আলমসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সেই একই বক্তব্য পুনরায় প্রকাশ করেন।

‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থান’-এর ঘোষণা শাহবাগ থেকেই!

হাসনাত আবদুল্লাহ শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শাহবাগে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, "আমরা প্রথম অভ্যুত্থান করেছি দেশের ঘুমন্ত বিবেক জাগাতে, এবার দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।" তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করলে সারা দেশে একযোগে চলবে গণবিস্ফোরণ।

তিনি বলেন, “শুধু শাহবাগ নয়, আমরা প্রস্তুত আছি—সারাদেশকেই অবরুদ্ধ করে দিতে।” পাশাপাশি শনিবার (আজ) বেলা ৩টায় ‘গণজমায়েত’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

স্লোগানে মুখর শাহবাগ: ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে!’

শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টার, পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করছেন। কারও মাথায় জাতীয় পতাকা, কারও হাতে কালেমাখচিত পতাকা। ছাত্রশিবিরের সদস্যদের মাথায় সংগঠনের নাম লেখা কাপড় বাঁধা।

স্লোগান উঠেছে—

  • “আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না”

  • “এই মুহূর্তে ব্যান চাই, আওয়ামী লীগের ব্যান চাই”

  • “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে?”

  • “জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”

  • “একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর”

এমন সব স্লোগানে মুখর পুরো শাহবাগ এলাকা।

বক্তব্যে আবেগ, প্রত্যয়ে তীব্রতা

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জুলাই অভ্যুত্থানের ‘শহীদ’ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী মরিয়ম খানম। তিনি বলেন, “আমার স্বামী এই সরকারের নিপীড়নের বলি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধু রাজনৈতিক দাবি নয়, এটা আমাদের ব্যক্তিগত দাবিও।”

এদিকে, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, “আমি এখানে এসেছি দলের পক্ষ থেকে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে।”

যমুনার সামনে শুরু, শাহবাগে বিস্তার

এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে, যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন এলাকায়, যেখানে এনসিপির আহ্বানে প্রথম অবস্থান নেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও কিছু সংগঠক। পরবর্তীতে আন্দোলন বিস্তার লাভ করে শাহবাগে। শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

তখন থেকেই শাহবাগে গাড়ি চলাচল বন্ধ, পুলিশও সতর্ক অবস্থানে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষ বা বড় ধরণের পুলিশি হস্তক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।


রাজপথেই নির্ধারিত হবে নিষিদ্ধের ভবিষ্যৎ?

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অবরোধ শুধু একদিনের কর্মসূচি নয়, এটি শুরু মাত্র। তাঁরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না। সারা দেশের অভ্যুত্থান কেন্দ্রগুলোতেও একযোগে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আওয়ামী লীগ কি আদৌ নিষিদ্ধ হবে? আর তার আগেই কী বড় কোনো সংঘাত ঘটতে চলেছে?

No comments found