close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আ. লীগ নেতার বাড়ি থেকে ৬ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৯ জন গ্রেফতার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ নেতার বহুতল ভবনে ছয় শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে আলোচিত মামলা দায়ের হয়েছে। প্রায় ১০ মাস পর দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ জন, প্রধান আসামি স্থানীয় প..

লালমনিরহাটে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রক্তাক্ত ষড়যন্ত্র: পুড়িয়ে হত্যা ছয় শিক্ষার্থী, মামলা দায়েরের ১০ মাস পর গ্রেপ্তার ৯ জন

লালমনিরহাটের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য অবশেষে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ছয় তরুণ শিক্ষার্থীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ভয়াবহ ঘটনায় অবশেষে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় দশ মাস পর, ২০২৫ সালের ২৭ মে মঙ্গলবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থী আরমান আরিফ।

এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের লালমনিরহাট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আলোচিত ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন খান সুমন, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘হুন্ডি সুমন’ নামে পরিচিত। এছাড়া আরও ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

পোড়ানো হয়েছিল ভবনের ভিতরেই — আগুনেই শেষ জীবনযুদ্ধ

মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শহরের এক বহুতল ভবনে ছয় শিক্ষার্থীকে আটকে রাখে সুমনের অনুসারীরা। তারপর পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে তাদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শিক্ষার্থীদের।

নিহতরা হলেন:

  • জোবায়ের হোসেন

  • আল শাহরিয়ার রিয়াদ তন্ময়

  • শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ

  • জনি মিয়া

  • রাধিক হোসেন রুশো

  • রাজিব উল করিম সরকার

তাদের সকলেই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছেন স্বজন ও সহপাঠীরা।

৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি আগেই জেলে

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুন্নবী জানিয়েছেন, “মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “তদন্তের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন খান সুমন আগেই অর্থপাচারসহ একাধিক মামলায় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।

জনরোষ ও বিচার দাবিতে উত্তাল লালমনিরহাট

ঘটনাটি আবারও আলোচনায় আসায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মামলার পর এখন তারা আশাবাদী হলেও বিচার প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়, সে দাবিও জানাচ্ছেন।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সংগঠিত হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও গভীর হয়।

রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি

এই ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকার নয়, বরং দেশের রাজনীতিতে অপরাধ-প্রভাবের বাস্তব রূপ তুলে ধরেছে। ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তির বাড়িতে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড দেশবাসীকে স্তব্ধ করেছে। তরুণদের জীবনের এমন নৃশংস পরিণতি আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।

 

লালমনিরহাটের ছয় শিক্ষার্থী হত্যা মামলাটি দেশের রাজনৈতিক অপরাধ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রভাবশালী আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কতটা কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নেয়। নিহতদের পরিবারের একটাই চাওয়া—ন্যায়বিচার, কোনো রকম প্রভাবের বাইরে থেকে।

Комментариев нет