close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
৮৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ: সাবেক আইজিপি বেনজীর ও এনবিআর সদস্য মতিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ছয় মামলা


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি দুর্নীতির মামলা করেছে।
মোট অভিযোগ:
দুদকের অনুসন্ধানে আসামিদের বিরুদ্ধে ৮৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠে এসেছে।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
রোববার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়।
একটি মামলায় বেনজীর আহমেদ:
অভিযোগ: ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫১ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন।
বেনজীর ও তার স্ত্রী জিসান মির্জা:
অভিযোগ:
৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ।
১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, এসব সম্পদ বেনজীর আহমেদের অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত।
বেনজীর ও তার মেয়ে ফারহিন রিশতা বেনজীর:
অভিযোগ: ৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৭৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ।
বেনজীর ও তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর:
অভিযোগ: ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকার অবৈধ সম্পদ।
মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়েছে।
মতিউর রহমান:
অভিযোগ:
৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ।
১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন।
মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী:
অভিযোগ:
শিবলীর ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ।
২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন।
দুদকের দায়ের করা মামলাগুলো দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় করা হয়েছে।
দুদকের তদন্ত ও সম্পদ ক্রোকের আদেশ
প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২৩ ও ২৬ মে আদালতের আদেশে বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
রাজধানীর গুলশানে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
মাদারীপুরের ১১৪টি জমির দলিল।
সাভারের একটি জমি।
এছাড়া, ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও শেয়ার সিকিউরিটি অবরুদ্ধ করা হয়।
মতিউর রহমানের বিতর্কের সূত্রপাত
গত ঈদুল আজহার আগে একটি ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার ঘটনা ভাইরাল হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ছাগল ক্রেতা তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জানা যায়, মতিউরের পরিবারের নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে মতিউর রহমান দাবি করেছিলেন, ইফাত তার সন্তান নয়। কিন্তু প্রমাণাদি প্রকাশিত হওয়ার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান।
শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের
দুদকের বিশেষ টিমের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে অবশেষে বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলো। এর আগে তাদের বিপুল সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য: এই মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
Ingen kommentarer fundet