close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

৮ মা ম লায় ইমরান খানের জামিন আবেদন খারিজ করল লাহোর হাইকোর্ট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০২৩ সালের সহিংসতা মামলায় ইমরান খানের জামিন আবেদন বাতিল, পিটিআই বলছে ‘ন্যায়বিচারের অপমান’, রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ালো পাকিস্তানে।..

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের জন্য আবারও এক কঠিন বাঁধা হাজির হয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ মে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা আটটি মামলায় তার জামিন আবেদন লাহোর হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। এই রায়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং পিটিআই এই সিদ্ধান্তকে ‘ন্যায়বিচারের চরম অপমান’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

লাহোর হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ, যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিচারপতি শাহবাজ আলি রিজভি, উভয় পক্ষের যুক্তি শুনার পর মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আদালত স্পষ্ট করেছেন, মামলাগুলোতে সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ প্রমাণের অভাব রয়েছে বলে ইমরান খানের জামিন অনুমোদন সম্ভব নয়।

ইমরান খানের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, এধরনের মামলায় প্রমাণ ছাড়াই রাজনীতির চক্রান্তমূলকভাবে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তারা দাবি করেন, ইমরানের বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট সহিংসতা প্রমাণিত হয়নি এবং এই মামলাগুলো তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে চালানো হয়েছে।

২০২৩ সালের ৯ মে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের পর সারাদেশে বিক্ষোভের ঘটনায় পাকিস্তান উত্তাল হয়ে ওঠে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা লাহোরের জিন্নাহ হাউস সহ বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনার উপর হামলা চালায়। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এই সহিংসতার পেছনে ইমরানের উস্কানির অডিও প্রমাণও রয়েছে, যদিও ইমরান নিজে এগুলো মানতে অস্বীকার করেছেন।

পিটিআই’র আইনজীবীরা আরও বলেছেন, এই মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের দলকে দুর্বল করে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপান্তর বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনার অংশ। তারা এটিকে দলীয় নেতৃত্বকে নির্মূলের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।

এই রায়ের পর পিটিআই পাঞ্জাব শাখা থেকে একটি কঠোর বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই রায় ন্যায়বিচারের নীতিকে অবমাননা করেছে। দলটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন। যদিও ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদ হারিয়েছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরানের প্রভাব এখনো কমেনি। মে ৯–এর ঘটনায় পিটিআই’র অনেক নেতা ও কর্মী বর্তমানে কারাগারে আছেন, তবে কিছু নেতা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

পিটিআই’র মতে, এসব মামলা ও বিচার প্রক্রিয়া পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দেশের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক রূপান্তরের পথ বন্ধ করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে।

ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার নেতৃত্বে পিটিআই দেশে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে একই সাথে তার শাসনামল বিভিন্ন বিতর্ক ও ষড়যন্ত্রেও আবৃত।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর থেকে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। ইমরান খান ও তার সমর্থকরা দাবি করছেন, তারা রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন এবং বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে।

মে ৯–এর বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনার পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে নানা মামলা চলছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করেছে। এই মামলাগুলোকে তারা ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে লাহোর হাইকোর্টের রায় ইমরানের রাজনীতি ও পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মামলাগুলো ও বিচার প্রক্রিয়া দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় সংকট।

পাকিস্তানের রাজনীতির ভবিষ্যত কেমন হবে তা এখন অনিশ্চিত। ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা ও জামিন বাতিলের রায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির রাজনৈতিক দলেরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়ে গভীর নজর রাখছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, যদি রাজনৈতিক সংঘাত বাড়তে থাকে তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্রভাব ফেলতে পারে।

পিটিআই ও ইমরান খানের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে আরও কর্মসূচি এবং গণআন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।

No se encontraron comentarios


News Card Generator