মাত্র ৮ ঘণ্টায় ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিরল পিংক হীরা উদ্ধার করেছে দুবাই পুলিশ। আধুনিক প্রযুক্তি ও সমন্বিত অভিযানে গ্রেফতার তিন এশীয়।
দুবাই আবারও দেখালো তাদের বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা হলো ২৫ মিলিয়ন ডলারের এক বিরল পিংক হীরা, যেটি পৃথিবীর অন্যতম দুষ্প্রাপ্য সম্পদ। দুবাই পুলিশের দক্ষতা ও দ্রুত পদক্ষেপ গোটা বিশ্বে আবারো আলোচনায় এনে দিল এই শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
চুরির ঘটনাটি ঘটে পরিকল্পিতভাবে। অপারেশনটির নাম দেওয়া হয় ‘পিংক ডায়মন্ড’। অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজন এশীয় নাগরিককে, যারা দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে এই অপরাধের পরিকল্পনা করছিল।
বিরল হীরার বৈশিষ্ট্য
উদ্ধার হওয়া হীরাটি কোনো সাধারণ হীরা নয়। এটি একটি ফ্যান্সি ইনটেন্স শ্রেণির পিংক ডায়মন্ড, যার ওজন ২১.২৫ ক্যারেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর স্বচ্ছতা, সিমেট্রি ও রঙ একেবারেই অনন্য। শীর্ষস্থানীয় একটি জেমোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট হীরাটিকে সনদপ্রাপ্ত করেছে। গবেষণা অনুযায়ী, এরকম মানের পিংক হীরা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ০.০১%। তাই এর বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতারণার কৌশল
তদন্তে উঠে এসেছে, চক্রটি প্রথমে একজন জুয়েলারকে টার্গেট করে। তারা ধনী ক্রেতার ভান করে বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া নেয়, আপস্কেল হোটেলে বৈঠকের আয়োজন করে, এমনকি একজন নামকরা হীরা বিশেষজ্ঞকেও নিযুক্ত করে। এতে জুয়েলার তাদের প্রতি আস্থা অর্জন করে এবং হীরাটি দোকান থেকে বাইরে আনার অনুমতি দেন।
পরে তারা ভুয়া ‘ক্রেতার’ সঙ্গে দেখা করার অজুহাতে জুয়েলারকে একটি ভিলায় ডেকে নেয়। সেখানে হীরা দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় চক্রটি।
পুলিশের ঝটিকা অভিযান
চুরির খবর পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুবাই পুলিশ বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে। সিআইডি বিভাগের আধুনিক ট্র্যাকিং প্রযুক্তির সহায়তায় তারা তিনজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করে, যারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
অভিযানে একাধিক স্থানে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং উদ্ধার করা হয় সেই বিরল পিংক হীরা। আশ্চর্যের বিষয়, হীরাটি একটি ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এবং চক্রটি সেটি এশিয়ার এক দেশে পাচার করার চেষ্টা করছিল।
মালিকের প্রতিক্রিয়া
হীরার মালিক দুবাই পুলিশের পদক্ষেপকে ‘অদ্ভুত দ্রুত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, চুরির খবর জানাতে ৯৯৯ নম্বরে কল করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ টহল পৌঁছে যায় এবং তদন্ত শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতি পুলিশের ক্রমাগত যোগাযোগ ও আশ্বাস আমাকে নিশ্চিত করেছে যে এই মামলাটি দ্রুত সমাধান হবে। সত্যিই পরের দিন সকালেই পুলিশ জানাল যে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আমার হীরাটি উদ্ধার করা হয়েছে।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো, দুবাই শুধু বিলাসিতা আর ব্যবসার জন্য নয়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য শহর।