৫২ বছর বয়সেও থেমে নেই স্বপ্ন , ইংরেজিতে ফেল করলেও দেলোয়ারের অঙ্গীকার— এবার পাস করেই ছাড়ব..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
At 52, Delowar Hossain failed only in English in his SSC exam—but his spirit remains unshaken. “InshaAllah, I will pass next time,” he vowed. His story proves age can't defeat determination...

৫২ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোচিত দেলোয়ার হোসেন ফেল করলেও হার মানেননি। বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আমি পাস করবই।’ বয়সকে হার মানিয়ে স্বপ্নপূরণের দৃঢ় অঙ্গীকার।

 

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন নামটি এখন স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে। বয়স যখন ৫২, তখন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন তিনি। এই বয়সে যখন বেশিরভাগ মানুষ সন্তানদের পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকেন, তখন দেলোয়ার নিজেই পরীক্ষার হলে বসে নিজের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছেন।

দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। শুধু জনপ্রতিনিধি হিসেবেই নয়, তিনি একজন শিক্ষাপ্রেমী মানুষ হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (এসএসসি, দাখিল ও সমমান) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর জানা যায়, দেলোয়ার সব বিষয়ে পাস করলেও কেবল ইংরেজিতে ফেল করেছেন। তবে এ নিয়ে একটুও হতাশ নন তিনি। বরং দৃঢ়চেতা ভঙ্গিতে বলেন, ‘মন খারাপ হয়েছে সত্যি, তবে আমি এসএসসি পাস করবই ইনশা আল্লাহ। আগামীবার আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেব।

দেলোয়ারের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীলভাবে। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রাথমিক বৃত্তি অর্জন করেন, পরে ১৯৮৮ সালে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জুনিয়র বৃত্তিও লাভ করেন। ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বহিষ্কৃত হয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এরপর জীবনের চাকা ঘোরে সংসার, কাজ, এবং দায়িত্বের ভিড়ে।

পরিবারে তাঁর ভাইবোনেরা সবাই উচ্চশিক্ষিত। এ কারণে মাঝে মাঝেই দেলোয়ার মনে করতেন, কিছু একটা অপূর্ণ থেকে গেছে তাঁর জীবনে। সে অপূর্ণতাকেই পূর্ণতা দেওয়ার জন্য আবারও তিনি হাতে তুলে নেন বই-খাতা। বয়সের ভার বা সমাজের কটাক্ষ কিছুই তাঁর আত্মবিশ্বাসকে টলাতে পারেনি।

পরীক্ষার আগে নিয়মিত স্কুলে যান, শিক্ষকদের পরামর্শ নেন, সময় বের করে পড়াশোনাও চালিয়ে যান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি। তাঁর এই প্রচেষ্টা এলাকার তরুণদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন, ‘দেলোয়ার ভাই আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, শেখার কোনো বয়স নেই।

তাঁর চেষ্টা, অঙ্গীকার এবং দৃষ্টান্তমূলক মানসিকতা আজ একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—আমরা কি বয়স, ব্যর্থতা বা সামাজিক চাপের ভয়ে অনেক স্বপ্ন থেকে পিছিয়ে আসি না?

দেলোয়ার হোসেন আজ শুধু একজন পরীক্ষার্থী নন, তিনি এই সময়ের এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করছেন, যে স্বপ্ন দেখে, সেই-ই জয়ী হয়—যত বাধাই আসুক।

Nema komentara