৫০ হাজার কোটি টাকার দায়ে বেক্সিমকো গ্রুপ, ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্ধেকই জনতা ব্যাংকের


দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপ বর্তমানে দেশের ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার দায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, বেক্সিমকো গ্রুপের অধীনে থাকা ৭৮টি প্রতিষ্ঠান এই বিশাল ঋণের জন্য দায়ী।
রোববার (৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী) হাইকোর্টে এক রিটের শুনানিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি শুনানি শেষে আগামী ২২ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
বিশেষ তথ্যাদি আদালতে উপস্থাপন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। আদালতে তিনি জানান:
বেক্সিমকো গ্রুপের মোট দায়ের পরিমাণ: ৫০ হাজার ৯৮ দশমিক ৩ কোটি টাকা।
শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ: ৩১ হাজার ৭৫ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপকে জনতা ব্যাংক একক ঋণ গ্রাহক হিসেবে তার প্রাপ্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি আর্থিক সুবিধা দিয়েছে।
এই সুবিধার মধ্যে ঋণ, পুনঃতফসিলিকরণ, মেয়াদ বাড়ানো, অতিরিক্ত ঋণদান ও এলসি সুবিধা রয়েছে।
রিট আবেদন ও হাইকোর্টের নির্দেশ:
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান গত ৪ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকোর ঋণসংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানিতে:
বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য ‘রিসিভার’ নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেক্সিমকোর আপিল ও আদালতের সিদ্ধান্ত:
এরপর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস রিসিভার নিয়োগ স্থগিতের আবেদন জানিয়ে আপিল বিভাগে যায়। গত ১২ নভেম্বর আপিল বিভাগ কেবল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে রিসিভার নিয়োগের আদেশ স্থগিত করেন। তবে, হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
জনগণের উদ্বেগ:
বেক্সিমকো গ্রুপের বিশাল এই ঋণের বেশিরভাগই জনতা ব্যাংকের। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ এবং অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা ব্যাংকিং খাতে বিপুল ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। আগামী শুনানিতে বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান এবং দায়ের পরিমাণ পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরবর্তী শুনানি: ২২ জানুয়ারি, ২০২৪
প্রাসঙ্গিক তথ্য:
বেক্সিমকোর ঋণের অর্ধেকই জনতা ব্যাংকের।
শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
ঋণ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
বিশ্লেষণ:
বেক্সিমকো গ্রুপের এই বিশাল দায় দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আসন্ন শুনানি এবং আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে দেশের ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি হ্রাসের কার্যকর ব্যবস্থা।
لم يتم العثور على تعليقات