৪০০ মিলিয়ন ডলারের বোয়িং গিফট! কাতারের উপহার নিয়ে ট্রাম্প বিতর্কের কেন্দ্রে – হিলারি বললেন ‘কিছু না কিছু তো চাইবেই..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বোয়িং উপহার নেওয়ার ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে তোলপাড় মার্কিন রাজনীতি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিসহ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটররাও প্রশ..

ট্রাম্পকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বোয়িং উপহার: কাতারের উপহার নিয়ে তীব্র বিতর্ক, কংগ্রেসে উদ্বেগ-হিলারির তীব্র সমালোচনা

মার্কিন রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্ত। কাতারের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ উড়োজাহাজ গ্রহণের খবর সামনে আসতেই শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। শুধু বিরোধী ডেমোক্র্যাট নয়, ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকানদের মধ্যেও এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ।

হিলারির তীব্র সমালোচনা: “কেউ কিছু না পেয়ে ৪০০ মিলিয়নের উপহার দেয় না”

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে প্রথম সরব হন ডেমোক্রেটিক দলের নেত্রী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) এ এক পোস্টে লিখেছেন, “৪০০ মিলিয়ন ডলারের উড়োজাহাজ বিনামূল্যে কেউ দেয় না। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থ জড়িত।” হিলারি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে কংগ্রেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের উদ্বেগ ও পেন্টাগনকে তদন্তের আহ্বান

এই উপহার গ্রহণের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। এ সপ্তাহে ৯ জন ডেমোক্রেট সিনেটর যৌথভাবে পেন্টাগনকে অনুরোধ জানিয়েছেন এই উপহারের সম্ভাব্য প্রভাব এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কোন ভূমিকা থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখার জন্য।

তারা এই ঘটনাকে সম্ভাব্য দুর্নীতির উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন। কংগ্রেস সদস্যদের বক্তব্য, এমন উপহার ভবিষ্যতে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিতে পারে এবং তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

এয়ারফোর্স ওয়ানের পরিবর্তে কাতারের বোয়িং ব্যবহারের পরিকল্পনা

ট্রাম্প কাতারের উপহার পাওয়া বোয়িং ৭৪৭-৮ কে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, তিনি প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে এই উড়োজাহাজ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

এ ধরনের ভাবনা কংগ্রেস এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, এয়ারফোর্স ওয়ান শুধু একটি বিমান নয়, এটি প্রেসিডেন্টের চলাচলের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও প্রযুক্তিনির্ভর বাহন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

রিপাবলিকান সিনেটরদেরও আপত্তি

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তার নিজ দলের কিছু সিনেটরও। সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটির সদস্য সিনেটর টড ইয়াং বলেন, “এটি আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো এখানে জড়িত। যেমন, বিমানটিতে কি কোনো লিসেনিং ডিভাইস বা নজরদারি প্রযুক্তি রয়েছে? এসব খুঁটিনাটি খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।”

টেড ক্রজের শঙ্কা: গুপ্তচরবৃত্তির ফাঁদ হতে পারে এই উপহার

আরেক রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রজ এ ব্যাপারে আরো একধাপ এগিয়ে সরাসরি এই উপহারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, বিদেশি রাষ্ট্র থেকে আসা উপহারগুলোর ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে সাইবার নিরাপত্তার গুরুতর হুমকি, যা রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সংবিধান কি বলে?

মার্কিন সংবিধান অনুসারে, কোনো প্রেসিডেন্ট বা সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে বিদেশি রাষ্ট্র, রাজা, যুবরাজ বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি থেকে ব্যক্তিগতভাবে উপহার গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এজন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যে সংবিধান পরিপন্থী, সে বিষয়ে অনেকের মত একরকম।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন উপহার গ্রহণ সংবিধান লঙ্ঘনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতার জন্ম দিতে পারে।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাতার থেকে পাওয়া বিলাসবহুল বোয়িং উপহার নিয়ে যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে, তা কেবল মার্কিন রাজনীতির ভেতরে নয়, বিশ্বরাজনীতির চর্চাতেও জায়গা করে নিচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে বিদেশি প্রভাব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সংবিধান অনুসরণে সাবেক প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। কংগ্রেস তদন্তে নামবে কিনা, বা ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত এই উপহার গ্রহণ করবেন কিনা— সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বিতর্ক যে এখানেই থেমে থাকছে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator