ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, দেশে রাজনৈতিক সন্ত্রাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আবারও ‘৩৬ জুলাই’ ফিরে আসা দরকার। যুবদল নেতার নেতৃত্বে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে জাতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছেন তিনি।
রাজনীতির নামে দেশের রক্তাক্ত অতীত বারবার সামনে এসে দাঁড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে সেই অতীতের এক প্রতীকী তারিখ, ‘৩৬ জুলাই’-এর কথা উল্লেখ করে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এস এম ফরহাদ লেখেন, “আবারও কোনো এক ‘ছত্রিশে জুলাই’ হয়তো এই দেশটাকে বাঁচাতে আসবে!” এই বাক্যটি নিছক একটি মন্তব্য নয়—এটি রাজনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ এবং ভবিষ্যতের জন্য এক রূঢ় সতর্কবার্তা।
তার এই মন্তব্য আসে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যেখানে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের নেতাকর্মীরা একটি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে। যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুবদল নেতার প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তবে বিষয়টি সামনে এলেও তেমন কোনো তীব্র প্রতিক্রিয়া তখন দেখা যায়নি।
এস এম ফরহাদ লেখেন, "প্রথমে কিছুটা নীরবতা ছিল, কিন্তু যখন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে। ভিডিও না ছড়ালে হয়তো এই ঘটনাও অন্যান্য খুনের মতো হারিয়ে যেতো।"
তিনি অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটিকে কেবল ‘আধিপত্য বিস্তারের জের’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেন এটি একটি স্থানীয় দ্বন্দ্বের অংশ মাত্র। অথচ এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ, ভয়ানক সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহার।
তিনি বলেন, “বিএনপি এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে রাজনৈতিক পরিচয়ের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, খুন আর সন্ত্রাস এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের চরম পরাজয়ের প্রতিচ্ছবি।”
তিনি আরও বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শহীদ জসিমকে হত্যা করে তার লাশের ওপর নৃত্য করা কিংবা ২০১২ সালে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার দৃশ্য এখনও জাতির মনে গাঁথা। আওয়ামী লীগ যেভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার বীজ বপন করেছিল, বিএনপি সেই বীজকে এখন আরও নিষ্ঠুরভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে।”
ফরহাদের এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, ‘৩৬ জুলাই’ কথাটি ইতিহাসের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে—একটি প্রতিবাদ, একটি প্রতিশোধ, কিংবা একটি শুদ্ধি অভিযানের আহ্বান। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন একটি বার্তার তাৎপর্য অস্বীকার করার উপায় নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফরহাদের বক্তব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াও জনমানসে এক ভিন্ন অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশে সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের শিকার হয়েছেন, তারা এই বক্তব্যে এক ধরনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা খুঁজে পেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—আবার কি ফিরে আসবে কোনো ‘৩৬ জুলাই’? সেই প্রতীকি তারিখ কি নতুন করে জাতির বিবেককে নাড়া দেবে? সময়ই হয়তো এর উত্তর দেবে।