৩৫ হাজার সৈনিকের ঈদ বিসর্জনে পরিচ্ছন্ন ১২ সিটি! আসিফ মাহমুদের ঘোষণা ঘুরে দাঁড়ানো দেশের গর্ব..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এক ঈদেই ৩৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নিঃশব্দ বিপ্লব! আসিফ মাহমুদের ঘোষণা—১২ সিটি কর্পোরেশনেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন। শহরজুড়ে পরিচ্ছন্নতার এই রেকর্ড কি সত্যিই সম্ভব? জানুন বিস্তারিত…..

৩৫ হাজার মানুষের নিঃশব্দ বিপ্লব: ঈদের রাতেই পরিচ্ছন্ন ১২ সিটি কর্পোরেশন!

দেশজুড়ে ঈদুল আজহার কোরবানির ধারা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যখন শহরজুড়ে দুর্গন্ধ ও বর্জ্যের আশঙ্কা করছিল নগরবাসী, তখনই যেন নিরব এক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন ৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাদের নিরলস পরিশ্রমে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন। এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শনিবার, ৭ জুন, এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন,

“সকল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। ৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সুন্দর করেছেন আমাদের ঈদ উদযাপন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”

 ঢাকার দুই সিটিতে বর্জ্য অপসারণের দৃষ্টান্ত

শনিবার দুপুর ২টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আনুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। উদ্বোধনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন,

“দুই সিটিতেই আজ রাতের মধ্যেই কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিতে পারব।”

এই কথা বাস্তবে রূপ নিতেই দেখা গেল রাত পোহাতেই শহরের অলিগলি, রাস্তা ও খোলা জায়গা থেকে পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা হয়েছে কোরবানির বর্জ্য। এমন গতিশীল ব্যবস্থাপনা সচেতন নাগরিকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে।

 ১২ সিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টা

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ছিল সমন্বিত। স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে প্রায় ৩৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেন, যারা ঈদের আনন্দ ভুলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন। ব্যবহৃত হয়েছে কয়েক হাজার গাড়ি, ট্রাক ও হিউম্যান রিসোর্স, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় বর্জ্য অপসারণ।

এই কর্মসূচিতে স্থানীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট, সেন্সর সিস্টেম ও জিপিএস প্রযুক্তির সহায়তাও নেওয়া হয়।

 পরিশ্রমের পিছনে যে ত্যাগ

এই অসাধারণ অর্জনের পেছনে যাদের শ্রম, তারা প্রায় সবাই সমাজের নীরব নায়ক। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজের ঈদ ভুলে পরিবারের থেকে দূরে থেকে মানুষের নগর জীবনকে আরামদায়ক করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

তাদের একজন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কর্মী বলেন,

“ঈদের দিনটাও আমরা ছুটি পাই না। সবাই বাড়ি গিয়ে খুশি থাকে, আমরা শহরের রাস্তায় কাজ করি। তবে মানুষ যখন ধন্যবাদ দেয় বা হাসি মুখে শহর দেখে, তখন পরিশ্রম সার্থক মনে হয়।”

 সম্মিলিত প্রচেষ্টার উদাহরণ

সরকারি এই উদ্যোগ স্থানীয় সরকার বিভাগকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি শুধু পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়, বরং একটি সফল ব্যবস্থাপনা, সঠিক নেতৃত্ব এবং প্রতিটি কর্মীর দায়িত্ববোধের বাস্তব উদাহরণ।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই ঘোষণা যেন কেবল তথ্যই নয়, বরং নগর ব্যবস্থাপনার নতুন ইতিহাসের সূচনা।


 উপসংহার

এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রযন্ত্র যদি চায়, তা হলে পরিকল্পিত প্রয়াসে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। ৩৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নিঃশব্দ লড়াই ও সরকারের নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে এবার ঈদের পরিচ্ছন্নতা মিশন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নগর ব্যবস্থাপনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

Inga kommentarer hittades