দেশে গুমের শিকার হওয়া মানুষদের নিয়ে গঠিত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন)। রাজধানীর গুলশানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, কমিশন ১,৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে অন্তত ২৫৩টি ঘটনার অকাট্য প্রমাণ পেয়েছে— যা আর কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিচারপতি মইনুল বলেন, “আমরা একটি তথ্যভিত্তিক নথি তৈরি করেছি ২৫৩ জন গুম হওয়া মানুষকে নিয়ে। এই দলিলের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মানুষগুলোর অভিজ্ঞতা একই রকম ভয়াবহ। তারা প্রত্যেকেই প্রায় একই ধরণের প্রক্রিয়ায় নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এইসব ঘটনা একেবারে কাকতালীয় নয়। বরং পরিকল্পিত, সুপরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সকলকে আগে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা দেওয়া হয়। একই ধরনের আইন, একই প্রক্রিয়া — সব কিছুই যেন একই ছকে বাঁধা।
কমিশনের প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এসব গুমের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখা ও ভয় সৃষ্টি করে জনগণকে দমন করা। বিচারপতি মইনুল বলেন, “শাসন দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে এই গুমগুলো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। এ যেন এক নিরব সন্ত্রাস, যেখানে মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে দিনের আলোতে, অথচ কেউ জানে না কে নিলো।
যদিও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম কমিশন প্রকাশ করেনি, তবে তাদের অনেকের বিদেশ যাত্রা ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। কমিশন বলছে, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে না ফেলেই আগামী দিনে ধাপে ধাপে আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে।
গুমের এই প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। এই ২৫৩টি ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরবর্তী প্রতিবেদনে হয়তো আরও গুমের তথ্য উঠে আসবে।
কমিশনের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এক অন্ধকার অধ্যায়ের পর্দা ফাঁস হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্যাতনের চক্র এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এই তথ্যগুলো। এখন সময় এসেছে, যাতে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায় এবং আর কোনো পরিবারকে আপনজন হারানোর বেদনায় কাঁদতে না হয়।