close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

২১৫ কোটি টাকার আইকনিক স্টেশন অকার্যকর; বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে কক্সবাজার রেলস্টেশন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Bangladesh Railway expresses inability to fully operate the first international-standard Cox's Bazar railway station due to high expenses, leading to a decision to hand over management to a forei..

দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের কক্সবাজার রেলস্টেশন নির্মাণের দুই বছর যেতে না যেতেই এর পরিচালনার ভার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইজারা বা বরাদ্দ না দেওয়ায় ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক এই স্টেশনটির বিভিন্ন স্থাপনা বর্তমানে কার্যত অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এককভাবে এই ব্যয়ভার বহন করতে অপারগ হওয়ায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে।

২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন উদ্বোধন হয়। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও, প্রায় দুই বছর ধরে স্টেশনের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়নি। রেলওয়ে হিসাব অনুযায়ী, স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে শুধু ইউটিলিটি খাতেই প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ হতে পারে, যা বহন করা রেলওয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিপুল ব্যয়ের কারণেই স্টেশনটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিকমানের আধুনিক নকশায় নির্মিত ছয়তলা এই স্টেশন ভবনটি বাইরে থেকে আলিশান কোনো স্থাপনার মতোই দেখায়। এতে কাচঘেরা স্থাপনা এবং আইকনিক ঢংয়ের ছাদ এটিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের প্রতিটি তলায় ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হলেও, বাস্তবে অবকাঠামো ব্যবহার উপযোগী নয়, যা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ভার: আন্তর্জাতিক দরপত্রের প্রস্তুতি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি চলছে। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, তারা চাচ্ছেন 'দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান' কক্সবাজার রেলস্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব নিক। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পাঁচতারকা হোটেল পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে—এমন প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান যদি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) করতে চায়, সেই সুযোগও রাখা হবে।

সরেজমিনে স্টেশনের চিত্র হতাশাজনক। গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন লোক ছাড়া স্টেশনটি ফাঁকা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখানে কোনো টিকিট কাউন্টার বা দিকনির্দেশনা নেই। চলন্ত সিঁড়িগুলো বন্ধ, কোনোটির সামনে ব্যারিকেড, আবার কোনোটির সামনে আবর্জনার বিন দিয়ে পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলোর অভাব এবং যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত টয়লেটটিও ছিল ব্যবহার অনুপযোগী।

নথি অনুযায়ী, ছয়তলা স্টেশনের নিচ তলায় এটিএম বুথ, ডাকঘর, লাগেজ ও লকার, যাত্রী বিশ্রামাগার থাকার কথা। দ্বিতীয় তলায় ১৭টি দোকান, ফুড কোর্ট, ওয়েটিং লাউঞ্জ ও প্রার্থনা কক্ষ। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় শোরুম, রেস্টুরেন্ট, ৩৯টি হোটেল রুম এবং মাল্টিপারপাস হল নির্ধারিত থাকলেও, এসব সুবিধা অবকাঠামোর মধ্যেই অচল হয়ে পড়ে আছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এই ঘটনাকে 'উদ্যোগের অভাব' বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভাবে শত কোটি টাকার বিশাল স্টেশনের কোনো সুফল মিলছে না এবং বিনিয়োগের রিটার্ন না আসায় এটি এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব কিছুতে শুধু বিদেশিদের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করার ওপরও তিনি জোর দিয়েছেন।


দেশের অন্যতম আধুনিক এই স্টেশনটি এখন কার্যত অচল অবকাঠামোতে পরিণত হয়েছে, যার পরিচালনাভার শেষ পর্যন্ত বিদেশিদের হাতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।

Hiçbir yorum bulunamadı


News Card Generator