দল নয়, এবার বিশ্বকাপের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে প্রকৃতি নিজেই—তাও আবার সূর্য! ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে শঙ্কার মেঘ জমেছে ফুটবলবিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য আসরের আগে ফুটবলারদের জীবন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল বিশ্ব ফুটবলারদের সংগঠন ফিফপ্রো।
তীব্র গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল ফ্লোরিডা ও মায়ামিতে জুন-জুলাইয়ের প্রচণ্ড গরমে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি।
ফিফপ্রোর ভাষায়, “গোল হজমের ভয় নয়, এবার মাঠে নামার আগেই ফুটবলাররা হার মানতে পারেন সূর্যের কাছে!”সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপে পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ। পিএসজি বনাম অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ এবং চেলসি বনাম এস্পেরাঁস—দুটি ম্যাচেই তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায় ফিফপ্রোর নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা।
তবুও ম্যাচ বন্ধ না করে চালিয়ে নেওয়া হয়। এতে ক্ষোভ ঝাড়েন অনেক খেলোয়াড় ও কোচ।
চেলসি কোচ এনজো মারেস্কা বলেন, "এই গরমে খেলা মানে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা!"
অ্যাতলেটিকোর ফুটবলার মার্কোস লরেন্তে বলেন, "এটা খেলাধুলা নয়, এটা টিকে থাকার লড়াই!"ফিফপ্রোর মেডিকেল ডিরেক্টর ড. ভিনসেন্ট গুটবার্গ বলেন, "২৮ ডিগ্রি ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার পার হলে ম্যাচ হওয়া উচিত না। অন্তত দুটি ম্যাচ বাতিল করা উচিত ছিল।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আবহাওয়ায় শরীর দ্রুত ডিহাইড্রেট হয়, হৃদযন্ত্রের ওপর পড়ে তীব্র চাপ। অতিরিক্ত ঘাম ও ক্লান্তিতে খেলোয়াড়দের কর্মক্ষমতা কমে যায়, এমনকি প্রাণঘাতী বিপদও ঘটতে পারে।
ফিফপ্রোর কৌশল ও নীতিমালাবিষয়ক পরিচালক আলেক্সান্ডার বিয়েলেফেল্ড বলেন, "দুপুরের সময় খেলার আয়োজন বন্ধ করে রাতের দিকে ম্যাচ নেয়া উচিত। এতে খেলোয়াড় ও দর্শক—দু’পক্ষই নিরাপদ থাকবে।"
ফ্লোরিডায় মেজর লিগ সকার (MLS) দীর্ঘদিন ধরেই দুপুরে ম্যাচ আয়োজন করে না। এই বাস্তবতা দেখিয়ে ফিফপ্রো এবার ফিফার ওপর চাপ তৈরি করতে চায়, যেন বিশ্বকাপেও দুপুরের সময় খেলা আয়োজন না করা হয়।
বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনও এক বছর বাকি, কিন্তু গরম নিয়ে বিতর্ক এখনই তুঙ্গে। ফুটবলপ্রেমীরা যেখানে গোলের উল্লাসে মাততে প্রস্তুত, সেখানে মাঠে যদি সূর্যই খেলোয়াড়দের জব্দ করে দেয়, তাহলে আসরটাই হয়ে উঠতে পারে বিপদের নাম।
ফিফা কী পদক্ষেপ নেয় তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। তারা কি নিজেদের আয়োজনে পরিবর্তন আনবে, নাকি দর্শক-খেলোয়াড়দের ঝুঁকির মুখেই ঠেলে দেবে বিশ্বকাপ?
এই বিশ্বকাপে হয়তো অফসাইড নয়, জীবনই সবচেয়ে বড় ফাউল হয়ে উঠতে পারে। ফুটবল নয়, এবার যুদ্ধটা হবে গরমের বিরুদ্ধে!