বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে জোরালো বিতর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চালানোর কথা বলা হলেও ভিন্নমত প্রকাশ করছে বিরোধী দলগুলো।
নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, "নির্বাচন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হওয়া উচিত।" প্রধান উপদেষ্টাও জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। তবে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, "রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন যেন প্রলম্বিত না হয়। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারগুলো শেষ করে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।"
সংস্কার আগে না নির্বাচন?
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কার ও নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিয়ে আলাদা মতামত দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, "ফ্যাসিস্ট সরকার জনসমর্থন হারিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে রাষ্ট্রের কাঠামো নষ্ট করেছে। মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে একই অবস্থা চলতে থাকবে।"
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর চরমোনাই) মনে করেন, "সংস্কার ছাড়া যারা নির্বাচনের কথা বলছে, তারা ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন করতে হবে।"
২০২৫ সালকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপ
২০২৫ সাল নির্বাচন এবং সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে। ১২ দলীয় জোট, বিএনপি এবং অন্যান্য সমমনা দলগুলোও একই বছর নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, "২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবে।"
বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন
সরকারি এবং বিরোধী দলগুলোর এই বিতর্কের মধ্যে ছাত্র-জনতা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি সংস্কার এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, "জুলাই-আগস্টের বিপ্লব শাসকের চেহারা বদলানোর জন্য হয়নি। এটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য হয়েছিল।"
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন কুমিল্লায় এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, "প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার আলোকে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখনো নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঠিক হয়নি।"
উপসংহার
২০২৫ সাল হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিতর্ক চললেও সকল পক্ষই একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচন দুটোই সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
প্রশ্ন থেকে যায়: নির্বাচনের আগে সংস্কার নাকি সংস্কারের পরে নির্বাচন? উত্তরের জন্য ২০২৫ সালের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।
Комментариев нет