২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝেই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, ওই নির্বাচন ছিল ‘ডামি’ ও প্রহসনার নির্বাচন। বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে চলমান শুনানির সময় হাবিবুল আউয়াল এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন। এটি ছিল প্রহসনের নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই এই ডামি নির্বাচন হয়েছে।” এই বক্তব্যে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে নতুনভাবে।
আদালত তার কাছে জানতে চায়, যদি নির্বাচন এতটাই অসফল ও ডামি হয়ে থাকে, তাহলে কেন তিনি পদত্যাগ করেননি? কিন্তু হাবিবুল আউয়াল এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান এবং উল্লেখ করেন যে অতীতে কোনও সিইসি পদত্যাগ করেননি।
তাঁর এই বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ও শেখ মুজিবুর রহমান শাসনামলের সময়ের অনিয়ম সম্পর্কেও আদালতে তুলে ধরেন। তিনি জানান, সেই সময়ের নির্বাচনেও অনিয়ম ছিল এবং জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এই মামলায়, যেখানে হাবিবুল আউয়ালসহ তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরও ২৪ জনের নাম রয়েছে, তাঁকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল, তবে আদালত তা মঞ্জুর করেনি। মামলাটি করা হয়েছে ভোটাধিকার লঙ্ঘন, প্রহসনের নির্বাচন করাসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে।
মামলাটি শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা হয়েছে বিএনপির নির্বাহী সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের পক্ষ থেকে। এই মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গ্রেফতার হন হাবিবুল আউয়াল, আর গত রবিবার গ্রেফতার হন কে এম নূরুল হুদাও। আদালত গত সোমবার নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
এই মামলায় আরও আসামি রয়েছেন:
-
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
-
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান,
-
সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার,
-
জাবেদ পাটোয়ারী,
-
এ কে এম শহীদুল হক প্রমুখ।
মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে, যা শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আদালতে আবেদন করে। বুধবার তা মঞ্জুর করেন আদালত।
এভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও তার নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠে এসেছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মামলা ও আদালতের এ ধরনের পদক্ষেপ নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করেছে।