close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, বিএনপি কি আবার ক্ষমতার কেন্দ্রে?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থান বরাবরই ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অতীতে তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থানের পর দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থান বরাবরই ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অতীতে তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থানের পর দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে ক্রমশ অপ্রিয় হয়ে পড়েছে, আর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরও ইতিহাসের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি এই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, এবং তাদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ১৯৭৫: অভ্যুত্থান ও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও তা স্থায়ী হয়নি। বরং ৭ নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ নতুন রাজনৈতিক শক্তি সৃষ্টি করে। এ সময় জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে দেশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তী তিন দশকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৯০: সামরিক শাসকের পতন ও বিএনপির উত্থান সেনাশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালে গণআন্দোলন শুরু হয়। জনগণের আন্দোলনের চাপে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, এবং ধারণা করা হচ্ছিল যে, পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরবে। কিন্তু ১৯৯১ সালের প্রথমবারের মতো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের ব্যর্থতারই প্রতিফলন। ২০২৪: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দৃশ্যপট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে একটি নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত তার সরকারের পতনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অতীতেও আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের কাছে নেতিবাচকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, যার রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছে বিএনপি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও বিএনপি এখনো সরকার গঠন করেনি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারা সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফেরার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বিএনপি তবে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। বিএনপিকে এবার মুখোমুখি হতে হবে নতুন রাজনৈতিক শক্তির, যারা ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। তারা দাবি করছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, তাই ছাত্র ও তরুণ নেতৃত্বের অধীনে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার সময় এসেছে। এ পরিস্থিতি বিএনপির জন্য একদিকে যেমন সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তেমনি নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতারও আভাস দিচ্ছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সবসময় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবস্থান করেছে। তবে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এই দ্বিদলীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। বিএনপি যদি তাদের কৌশলগতভাবে শক্তিশালী করতে পারে এবং নতুন প্রজন্মের সমর্থন আদায় করতে পারে, তবে তাদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে এবার শুধু বিএনপির বিরুদ্ধেই নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। উপসংহার বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবারই গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বিএনপি বড় রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হলেও, নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতের নির্বাচনে কোন শক্তি জনগণের সমর্থন অর্জন করতে পারে এবং দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
Geen reacties gevonden