close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

২০২৩ সালে কর ফাঁকিতে রেকর্ড ক্ষতি: রাজস্ব হারিয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সিপিডির এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য—২০২৩ সালে কর ফাঁকির কারণে বাংলাদেশ হারিয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এর অর্ধেকের বেশি এসেছে করপোরেট কর ফাঁকি থেকে। এমন পরিস্থিতিতে করব্যবস্থার দুর্বলতা..

২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার কর ফাঁকির কারণে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে, তা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর এক বড় ধরনের চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল ২০২৩ সালেই বাংলাদেশ আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

এই গবেষণা তুলে ধরা হয় সোমবার, সিপিডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের উত্তরণে করপোরেট আয়কর সংস্কার’ বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে। সিপিডি জানায়, কর ফাঁকির এই বিশাল অংকের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ এক লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা এসেছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে।

গবেষণা আরও তুলে ধরে, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ২০১২ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায়। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে একাধিক কাঠামোগত ও প্রশাসনিক সমস্যা।

সিপিডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উচ্চ করহার, দুর্বল প্রশাসন, জটিল ও অস্বচ্ছ কর আইনের কাঠামো এবং কর ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতিই কর ফাঁকির মূল কারণ। এসব কারণের ফলে শুধুমাত্র রাজস্ব হারানো নয়, বরং সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন এবং যারা নিয়ম মেনে কর পরিশোধ করেন, তাদের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি হয়।

প্রতিবেদনটি আরও সতর্ক করে দিয়ে বলে, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে উত্তরণের পথে। এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে হলে করব্যবস্থার জোরদার সংস্কার জরুরি। কারণ, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আগমন বাড়বে, এবং যদি কর ফাঁকির প্রবণতা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে বিদেশি বিনিয়োগের ফাঁক-ফোকর দিয়ে আরও বড় আকারে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ অবস্থায় সিপিডি কর ব্যবস্থা সংস্কারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে:
১. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করা, যাতে নীতি প্রয়োগের সক্ষমতা বাড়ে।
২. ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন, যাতে কর সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আসে।
৩. কর নীতিতে ব্যাপক সংস্কার, যাতে করদাতারা উৎসাহিত হন এবং কর ফাঁকি কমানো সম্ভব হয়।

এই গবেষণার মূল বার্তা হলো—বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে অর্থনৈতিক উত্তরণ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায়, তবে তাকে কর প্রশাসনের দুর্বলতা কাটিয়ে একটি আধুনিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নয়তো, প্রতিবছর এই ধরনের রাজস্ব ক্ষতির কারণে উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে সরকার কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ করতে পারবে না।

সিপিডির এই গবেষণা রিপোর্টটি তাই শুধু একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক সতর্কবার্তা।

Không có bình luận nào được tìm thấy