গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ফল ছিনতাই ছিল শেখ হাসিনার পতনের সূচনা। সেই নির্বাচন থেকেই ছাত্র রাজনীতির নতুন ধারা শুরু হয়।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেছেন, ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনই শেখ হাসিনার পতনের বীজ বপন করেছিল। তাঁর মতে, ওই নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল প্রকাশ্যে ফলাফল ছিনতাই করে এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করে।
গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে রাশেদ খান এই মন্তব্য করেন। তিনি লিখেছেন, “ডাকসুর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করা হবে। কিন্তু আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিই যে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করা যাবে না। পরে যখন সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বৈঠকে আসেন, তারা এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেন। শেখ হাসিনার এই অসম্মান তার দলীয় ছাত্রসংগঠন ও অনুসারীরা মেনে নিতে পারেনি। প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক হামলা চালিয়েছে।”
রাশেদ খান অভিযোগ করেন, “২০১৯ সালের ডাকসু মূলত ছাত্রলীগের প্যানেল দখল করেছিল। যদিও ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে আমরা ভিপি, জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদের ১১টি পদে জয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগ ফলাফল ছিনতাই করে। তার পরও যে দু’টি পদ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের হাতে আসে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রকৃত কাজ করতে।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন ছিল মূলত ছাত্ররাজনীতির মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। সেখান থেকেই শেখ হাসিনার পতনের বীজ রোপণ হয়। এই নির্বাচন শুধু একটি সাংগঠনিক পরিবর্তন নয়, বরং ছাত্র আন্দোলনের ভেতর থেকে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করে দেয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন আমাদের প্রজন্মকে নতুনভাবে জাতির সামনে হাজির করেছে। এ আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত তরুণরাই জাতিকে পরবর্তীতে গণ-অভ্যুত্থান উপহার দিয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রলীগের ছিনতাই, হামলা এবং বিরোধীদের দমন প্রচেষ্টা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়। সেই ক্ষোভই আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় পরিবর্তনের সূত্রপাত করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
রাশেদ খানের দাবি অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এখান থেকেই ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সংঘাত চরম আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে বৃহত্তর গণআন্দোলনের ভিত্তি তৈরি হয়।
তাঁর ভাষায়, “ডাকসু নির্বাচন থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধ আজ জাতিকে গণঅভ্যুত্থান উপহার দিয়েছে। এটাই আমাদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।”