মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ৪টি বিয়ে! টার্গেট ষাটোর্ধ্ব ধনী পাত্র, উদ্দেশ্য অর্থ ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে পালানো। রংপুরের সানজিদা ও তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বয়স মাত্র ১৯, অথচ এর মধ্যেই চারটি বিয়ে সম্পন্ন করেছেন রংপুরের সানজিদা আক্তার স্মৃতি। তবে এ বিয়েগুলো ছিল না ভালোবাসা কিংবা সংসার করার উদ্দেশ্যে—বরং প্রতারণার চক্রের অংশ। তার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থ উপার্জন, আর এজন্য বেছে নিতেন ষাটোর্ধ্ব ধনী পুরুষদের, যাদের আবেগ ও একাকীত্বকে পুঁজি করে তিনি চালিয়ে যেতেন তার প্রতারণার জাল।
শেষবার সানজিদার শিকার হন মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি স্ত্রী হারানোর শোক কাটিয়ে চার বছর পর গত ২১ মার্চ আবার বিয়ে করেন। পাত্রীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি বিয়ে করেন সানজিদাকে। শুরুতে সব ঠিকঠাক মনে হলেও তিন মাসের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় বাস্তবতা। এক সন্ধ্যায় ঘরে থাকা প্রায় ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ হন সানজিদা। কয়েকদিন পর মোবাইলের মাধ্যমে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন তিনি।
বিব্রত, লজ্জিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন—এই বিয়ে ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তৎপরতায় সানজিদাকে তার নিজ জেলা রংপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় তার সহযোগী ও মাকে।
তদন্তে উঠে আসে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দীন কবীর জুয়েল জানান, সানজিদার বিয়ে কখনোই সংসার গঠনের জন্য ছিল না। তিনি আগেও একই কৌশলে তিনটি বিয়ে করেছেন এবং প্রতিবারই স্বামীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়েছেন।
এতটাই নিখুঁত ছিল তার অভিনয়, যে কোনো পুরুষ সহজেই ফাঁদে পড়তেন। তিনি কোমল ও দুঃখিনী মুখের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলেন এক ঠান্ডা মস্তিষ্কের প্রতারক চরিত্র। পুলিশ আরও জানতে পারে, সর্বশেষ স্বামীর কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকায় রংপুরে একটি নতুন বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার মা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়, আবেগের ওপর ভিত্তি করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মোহাম্মদ আলীর মতো অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন শুধু পরিচয় ও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই না করে বিয়েতে সম্মতি দেয়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সানজিদার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। সবার জন্য বার্তা হচ্ছে—বিয়ে কিংবা যেকোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে অবশ্যই প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে নেওয়া উচিত, নইলে এক মুহূর্তের আবেগ পুরো জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে।