জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে আয়োজন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৯ আগস্ট ঢাকায় মহাসমাবেশ ও মিছিল করবে।
ঢাকা আবারো বড় রাজনৈতিক সমাবেশের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। আসন্ন ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত হবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঘোষিত মহাসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
দলটি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে ‘পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন)’ পদ্ধতির বাস্তবায়ন, জুলাই সনদকে আইনি বৈধতা প্রদান এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। একদিকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নতুন পদ্ধতি গ্রহণ এবং দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, যিনি চরমোনাই পীর নামেও পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছেন। দলের কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ের অন্যান্য নেতারাও এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।
আজ বিকেলে দলের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ। সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর সেক্রেটারি মাওলানা আরিফুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামালসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম ও সেক্রেটারি আলহাজ্ব আব্দুল আউয়াল মজুমদার এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা দেশের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। তারা অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।
তারা বলেন, “যদি এখনই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে দেশ ভয়াবহ বিপদের দিকে ধাবিত হবে।” তাই জনগণের স্বার্থে এবং দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেবল নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নয়, বরং সরকারের উপরও চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। বিশেষ করে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি বাংলাদেশে নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিতে পারে। অনেকের মতে, এই দাবিটি গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য নিয়েই তোলা হলেও, এর বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
১৯ আগস্টের কর্মসূচি কতটা জনসম্পৃক্ততা তৈরি করতে পারে, সেটিই এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, যদি সমাবেশ সফল হয় তবে ভবিষ্যতে ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব আরও বাড়তে পারে।