close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
১৮ হাজার শিক্ষার্থীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস বাস্তবায়নে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দুঃখ এবার কি দূর হতে চলেছে? প্রায় ১৯ বছর ধরে অব্যবস্থাপনা, আন্দোলন এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ার একের পর এক ঘটনার পর অবশেষে নতুন ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিনের ভোগান্তির চিত্র
২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা নানা সংকটের সম্মুখীন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি অনুষদ, ৩৬টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু, তারা এখনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আবাসন সংকট, পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাব, গবেষণার সুযোগ সীমিত, খেলার মাঠের অনুপস্থিতি, এবং অত্যন্ত সীমিত জায়গায় ক্লাস পরিচালনার ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ২০১৮ সালে সরকার কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস তৈরির ঘোষণা দেয়। ২০০ একর জমির উপর নির্মিতব্য এই ক্যাম্পাসের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রকল্পের ৪০% কাজ অসম্পূর্ণ।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও বাধা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বারবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, তদারকির অভাব এবং নকশাগত ত্রুটির কারণে কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। জানা গেছে, এখনো ১১.৪০ একর জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে, ফলে পুরো ক্যাম্পাসের সীমানা দেয়াল সম্পূর্ণ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের একাংশে কিছু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও অনেক জায়গায় এখনো মাটি ভরাট হয়নি। শুধুমাত্র কিছু সিমেন্টের বিম ও কলাম দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলোতে মরিচা পড়ে গেছে। সুইমিং পুলের কাজ প্রায় শেষ হলেও একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক আবাসন, খেলার মাঠ, গবেষণাগার, ও চিকিৎসাকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে!
দীর্ঘসূত্রিতা ও অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীরা বারবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। অবশেষে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি উঠতে থাকে। সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম জানান, সেনাবাহিনী এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিলে এটি গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
এই বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হবে এবং নতুন ক্রয় পরিকল্পনার আওতায় আনা হবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি জানান, সেনাবাহিনী ইতিবাচকভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ হবে—এই আশায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না। তারা চান, এবার যেন প্রকল্পটি কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই বাস্তবায়িত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামিম আহমেদ বলেন, "এত বছর ধরে শুধু আশ্বাস শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছু দেখিনি। যদি সেনাবাহিনী প্রকল্পের দায়িত্ব নেয়, তাহলে অন্তত সময়মতো কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।"
উপসংহার
প্রায় দুই দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটবে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সেনাবাহিনীর হাতে দায়িত্ব গেলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দুঃখ লাঘব হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীরা আর নতুন কোনো প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়তে চান না, তারা চান দ্রুত বাস্তবায়ন ও সুপরিকল্পিত ক্যাম্পাস।
No comments found



















