ইতালির রোমে বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অল্প ভূমির দেশ হয়েও বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষকে খাওয়ায় ও ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দেশের অর্জন বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ অল্প আয়তনের একটি দেশ হলেও বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে মূল বক্তা হিসেবে বলেন, “বাংলাদেশ ছোট ভূমির দেশ, আয়তনে ইতালির অর্ধেক। তবুও আমরা ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে খাওয়াচ্ছি, পাশাপাশি আশ্রয় দিচ্ছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে।”
তিনি বলেন, একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এত মানুষের খাদ্য, আশ্রয় ও জীবিকা নিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। বিশ্ব যখন খাদ্য ঘাটতি, যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটে বিপর্যস্ত, তখন বাংলাদেশ তার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে টেকসই ও উদ্ভাবনী পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, “আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, যা আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। আমাদের কৃষকেরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, কৃষি মেকানাইজেশনে সরকার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছে, যাতে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যার ফলে দেশের শিশুদের খর্বতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। খাদ্যতালিকা হয়েছে আরও বৈচিত্র্যময়, এবং মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা চাই কৃষি হোক আরও সবুজ ও পরিবেশবান্ধব। আমাদের কৃষকেরাই এই পরিবর্তনের মূল নায়ক।”
তিনি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO)-র ভূমিকা ও সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, “আমি আনন্দিত যে ২০১৬ সালে FAO কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘Nobel Peace Laureates Alliance for Food Security and Peace’— যার একজন সদস্য আমি— এখন FAO’র এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এটি ভবিষ্যতেও নতুন সাফল্যের দ্বার খুলে দেবে।”
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের কৃষি ও মানবিক সহায়তার এই চিত্র বিশ্বকে দেখাচ্ছে কীভাবে একটি উন্নয়নশীল দেশও উদ্ভাবন, সহযোগিতা ও মানবতার মাধ্যমে পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হতে পারে।
এই বক্তব্যে তিনি শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা ও জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যতের দিকেও বাংলাদেশের অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন।