১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারের প্রতি কঠোর আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবি পূরণ না হলে আবারও রাজপথে
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারের প্রতি কঠোর আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবি পূরণ না হলে আবারও রাজপথে নামার অঙ্গীকার করেছে সংগঠনটির নেতারা। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত 'মার্চ ফর ইউনিটি' সমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারির সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, "১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা না হলে ছাত্র-জনতা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।" তিনি ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত না করে রাজপথ ছাড়বেন না।" বিচারের আগেই নির্বাচন নয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, "আওয়ামী লীগের বিচারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের ন্যায়বিচার এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমরা জুলাইয়ের শক্তি নিয়ে রাস্তায় আছি। '৯০ ও '৭১-এর মতো '২৪ সালকে ব্যর্থ হতে দেব না।" জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "দেশের মানুষ নতুন সংবিধান এবং সংস্কার চায়। আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংবিধান সংশোধন করবেন।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয়।" রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও সরকারের সমালোচনা জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আমরা আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চাই না।" তিনি সতর্ক করে বলেন, "ঘোষণাপত্রে যদি নিহত ও আহতদের কথা উল্লেখ না থাকে, তবে জনতা সেই ঘোষণা মেনে নেবে না।" আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "আমাদের অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারেনি। এজন্য সচিবালয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।" তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট পরিবর্তন করেই দায় সারছে।" গণহত্যার বিচার এবং অর্থপাচার রোধের দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, "আমরা সরকারের কাছে গণহত্যার বিচার, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা দাবি করছি।" তিনি আরও বলেন, "কোনো দেশ আমাদের মাথায় বসতে চাইলে তাদের সেই অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।" সমাবেশের পরিবেশ গতকাল সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করে। বিকাল ৩টায় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে পলাশী, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সমাবেশে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ', 'শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই', 'একটা একটা খুনি ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর' প্রভৃতি স্লোগানে প্রকম্পিত হয় চারপাশ। সমাবেশে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শহীদ শাহরিয়ার হাসানের বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, "খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি চাই।" শহীদ মীর মাহফুজুর রহমানের বাবা বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কাদের ও হাছান মাহমুদরা কীভাবে পালাল, তার জবাব চাই।" আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়ক উপস্থিত থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার আদায় এবং জনগণের দাবি পূরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আরিফ সোহেল, রফিকুল ইসলাম, শ্যামলি সুলতানা, সালাউদ্দিন আরমান, আসাদুল্লাহ গালিব, এবং আহত আন্দোলনকর্মীরা। শেষ কথা আন্দোলনের নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দাবিগুলো পূরণ না হলে ছাত্র-জনতা রাজপথে ফিরে আসবে। ১৫ জানুয়ারি তাদের চূড়ান্ত সময়সীমা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আন্দোলনের প্রভাব দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে।
No comments found