নির্মাণ শেষে সেই সময়কার সাভার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভবনটি ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা করলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় সিভিল সার্জন ভবনটি গ্রহণ করেননি।
ভবনের মধ্যে এখনো স্থাপন হয়নি প্রয়োজনীয় সোলার প্ল্যান্ট, সম্পূর্ণ হয়নি বৈদ্যুতিক সংযোগ, নেই সংযোগকারী করিডোর, এমনকি অ্যাপ্রোচ সড়কেও কার্পেটিং করা হয়নি। এসব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজ অসমাপ্ত থাকায়, ভবনটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও থমকে যায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালির ঘটনা ঘটলেও, আজ পর্যন্ত কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুধু কাগজে-কলমেই আটকে আছে এই ট্রমা সেন্টারের ভবিষ্যৎ।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারটি নির্মিত হলেও, তা ব্যবহারের কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। বর্তমানে ভবনটির চারপাশের অবস্থা করুণ। খসে পড়েছে সিমেন্টের প্লাস্টার, দেয়ালে জন্ম নিয়েছে ঝোপঝাড় ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি, জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে বহু আগেই। মূল ফটকে ঝুলছে তালা, মরিচা পড়ে গেছে কাঁটাতারে ঘেরা গেটে। ভবনের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে ঘন অন্ধকার, মাকড়সার জালে ঢেকে গেছে ছাদ থেকে দেয়াল, আর ময়লার স্তরে ঢেকে গেছে মেঝে। দেখতে যেন এক পরিত্যক্ত ভুতুড়ে ভবন।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে এই বিল্ডিংটা দেখে আসছি। তখন যেমন ছিল, এখনও ঠিক তেমনই পড়ে আছে। কোনো উন্নতি হয়নি, কোনো অগ্রগতি হয়নি। অথচ, আমাদের এই অঞ্চলে ট্রমা সেন্টারটি অত্যন্ত জরুরি। এখানে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো একটি আধুনিক ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।”
তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার লিখিত আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিচ্ছে না।
স্থানীয়দের মতে, এই ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে ধামরাইসহ আশপাশের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মানুষের জন্য একটি বড় উপকার হতো। দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকত, অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো।
এখন প্রশ্ন হলো, ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও কেন এখনো এই গুরুত্বপূর্ণ ট্রমা সেন্টারটি চালু হলো না? কবে আসবে সেই প্রত্যাশিত উদ্যোগ, যে উদ্যোগ বদলে দিতে পারে একটি এলাকার স্বাস্থ্যসেবার চিত্র?