গত ১২ দিনে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত মাটিতে সংঘটিত পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরানের অন্তত ১৪ বিজ্ঞানী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রসায়নবিদ, পদার্থবিদ ও প্রকৌশলী। এ খবর আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির মাধ্যমে প্রচার করেছে আল-জাজিরা।
ফ্রান্সে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জোশুয়া জারকা গত সোমবার বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা থেকে যে পারমাণবিক অবকাঠামো টিকে আছে, সেগুলো ব্যবহার করে ইরান অস্ত্র তৈরিতে বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আরও জানান, ইরানি বিজ্ঞানীদের এই গোটা দল নিশ্চিহ্ন হওয়ায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বছরের পর বছর পিছিয়ে পড়েছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানে আরও এক পরমাণুবিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। তার নাম মোহাম্মদ রেজা সেদিঘি সাবের। জানা যায়, সংঘাত শুরুর দিন ১৩ জুন তাঁর ওপর হামলা হয়েছিল; সে সময় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন, তবে এই হামলায় তাঁর ১৭ বছর বয়সী ছেলে নিহত হন।
ইসরায়েলি হামলায় শুধু সাবেরই নয়, এই সময়ে ইরানের শীর্ষস্থানীয় আরও বিজ্ঞানী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছেন। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানে এখনও বহু বিজ্ঞানী বেঁচে আছেন এবং তারা শিগগিরই নিহতদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ফলে এই হত্যাকাণ্ড ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, তবে তা শেষ করার শক্তি নেই।
১২ দিনের এই সংঘাতের শুরু হয় ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ইরানে একটি হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে। এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তখন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা ইরানের প্রতিক্রিয়া তীব্র করে। ২৩ জুন ইরান কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিকে নিশানা করে হামলা চালায়।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অতি সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায় ২৩ জুন যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হয়। এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, যা মঙ্গলবার কার্যকর হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি মধ্যপ্রাচ্যে সাময়িক শান্তি আনলেও, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ইসরায়েলের এই হত্যাকাণ্ড কর্মসূচিকে অবশ্যই কয়েক বছর পিছিয়ে দেবে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটি সম্পূর্ণরূপে শেষ করবে না।
অতীতের সংঘাত ও ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও, এই যুদ্ধবিরতি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। বিশ্ব রাজনীতির নজর এখন সেখানে কেমন শান্তি বজায় থাকে তার দিকে নিবদ্ধ রয়েছে।



















